#ঢাকা ব্যাংক এমডি
ঢাকা ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের একটি বণিজ্যিক ব্যাংক। দেশের প্রথম সারির ১০টি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকা ব্যাংকের যাত্রা ১৯৯৫ সালে। সেই হিসেবে বর্তমানে ব্যাংকটির বয়স ৩০ বছর। দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ঢাকা ব্যাংক আর্থিক সূচকগুলো মজবুত অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা, আগামীর পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্থনৈতিক প্রতিবেদক রমজান আলী।
প্রশ্ন: বর্তমানে ব্যাংক খাতে এক ধরনের সংকট চলছে। সেখানে আপনার ব্যাংক অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এর রহস্য কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আগস্টের পর অনেক ব্যাংকই গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে হিমশিম খেয়েছে। বর্তমানে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঢাকা ব্যাংক কোনো সংকটে ছিলো না। আপনারা জানেন, দেশের শক্তিশালী দশটি ব্যাংকের মধ্যে ঢাকা ব্যাংক অন্যতম। বরং আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সাপোর্ট দিয়েছি। এ ব্যাংকটির ৭০ শতাংশ ঋণ কর্পোরেট বিজনেস। আর ৩০ শতাংশ কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই), কৃষি ও ক্রেডিট কার্ডে ঋণ রয়েছে। আমাদের সবকিছুতেই ‘গ্রোথ’ ভালো অবস্থানে আছে। এখানে শতভাগ সুশাসন রয়েছে। ঢাকা ব্যাংকের অনেক ভালো প্রকল্প রয়েছে। নারীদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা আছে। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে যে কেউ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারে। এতে ঘরে বসেই ৫০ হাজার টাকা ঋণ পেতে পারে। এতে কোথাও যেতে হয় না। শুধু অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করলেই হয়। এছাড়া এ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কাজে খুবই পারদর্শী। গ্রাহকদেরকে খুবই আন্তরিকভাবে সেবা দিকে থাকে। ফলে গ্রাহকরাও খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ঢাকা ব্যাংকের সেবা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
প্রশ্ন: ঢাকা ব্যাংকের আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাই ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই), কৃষি ও ক্রেডিট কার্ডে ৩০ শতাংশের মতো ঋণ রয়েছে। এ খাতে আরো ঋণ বাড়ানো হবে। এছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। মানে ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের কাছে বেশি পৌঁছানো যায়। বর্তমানে ডিজিটাল প্লাটফর্ম মানুষ বেশি পছন্দ করে। কারণ ঘরে বসে এখন মানুষ ব্যাংকিং করতে বেশি পছন্দ করে। এছাড়া ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরাসরি এতো গ্রাহকের কাছে যাওয়া সম্ভব না। তাই এখন ডিজিটা সক্ষমতার উপরে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে যার যত ডিজিটাল সক্ষমতা বেশি, সেই ব্যাংকই তত বেশি এগিয়ে যাবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছানো সম্ভব। যা শাখা ও উপ-শাখা দিয়ে সম্ভব না। তাছাড়া অনেকটা খরচও কমানো সম্ভব। ‘ঢাকা গো’ নামে একটা অ্যাপস রয়েছে। এই অ্যাপসের মাধ্যমেই সবাই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবে। ঢাকা ব্যাংক আগামী পাঁচ বছরে মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে থাকতে চাই। ঢাকা ব্যাংকের ভালো প্রোডাক্ট রয়েছে। সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানের জন্য কাজ করছি। কিভাবে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, সেই জন্য কাজ করছি। ঢাকা ব্যাংকের ঋণ দেয়া সক্ষমতা রয়েছে। তাই এ সক্ষমতা কাজে লাগাতে চাই। এছাড়া খেলাপি ঋণ আরো কমিয়ে আনতে চেষ্টা করবো। যাতে দুই শতাংশের মধ্যে রাখতে পারি।
প্রশ্ন: বর্তমানে ব্যাংক খাতের গলার কাটা খেলাপি ঋণ। সেখানে আপনার ব্যাংকে খেলাপি কম থাকার কারণ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমরা ঋণ দেয়ার আগে গ্রাহকের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগ করে থাকি। তাই অন্য সব ব্যাংকের চেয়ে আমাদের বিনিয়োগ অনেক ভালো অবস্থানে আছে। আমরা ঝুঁকিটাকে আগে মোকাবেলা করি। ফলে আমাদের খেলাপি বিনিয়োগের মাত্রা অনেক কম। সার্বিকভাবে বলতে গেলে, ঢাকা ব্যাংকের সবধরণের ঋণ দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। বরং আমরা সেসব গ্রাহকদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। বর্তমানে ব্যাংক খাতে একটা সংকট চলছে। তাদের বলছি, আসেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো। তাই আমাদের যেহেতু সমর্থ রয়েছে। তাই আমরা তাদেরকে সেবা দিতে রাজি আছি। এছাড়া এখনো ভালো উদ্যোক্তা আছে। ঢাকার বাহিরেও ভালো উদ্যোক্তা রয়েছে। যারা ভালো ব্যবসা করছেন। তাদেরকে আমরা ঋণ দিচ্ছি। ভালো ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যবসার পলিসি চালু করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: বলা হয়ে থাকে একটি ব্যাংকের ভিত্তি মজবুত করতে সুশাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনার ব্যাংকের সুশাসন বিষয়ে জানতে চাই?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: শতভাগ সুশাসন রয়েছে ঢাকা ব্যাংকে। যতোগুলো ভালো ব্যাংক রয়েছে, সেইসব ব্যাংকের সুশাসন খুবই ভালো। সুশাসন ভালো থাকার কারণে তারা ভালো ব্যাংক হতে পেরেছে। তাই ঢাকা ব্যাংকের পর্ষদ খুবই ভালো। ব্যাংকিংয়ের প্রতিটি স্তরে সুশাসন থাকা দরকার আছে। সবাই যদি স্বাধাীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে দেখা যাবে ব্যাংকিংখাতে অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে। ব্যাংকের পর্ষদ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরেই যদি জবাবদিহিতা থাকে সেখানেই সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। তবে ঢাকা ব্যাংকে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সবার জবাবদিহিতা একইরকম।
প্রশ্ন: জুলাই পরবর্তী সংকটে আপনার ব্যাংকের আর্থিক সূচক কিভাবে ভালো অবস্থানে ধরে রেখেছেন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের আর্থিক সূচকের ‘গ্রোথ’ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে আমাদের খেলাপি ঋণ ৪ শতাংশ কাছাকাছি। এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ খুবই ভালো। এ ব্যাংকে ব্যবসায়ীক চিন্তায় ঋণ দেয়া হয়ে থাকে সবাইকে। কেউ রাজনৈতিক চিন্তায় ঋণ নিতে পারে না। ব্যাংকের পর্ষদ ভালো মানেই, সেই ব্যাংক ভালো। এ ব্যাংকের পর্ষদ হলো শতভাগ ব্যবসায়ীক চিন্তা ও মানুষের সেবা দেয়ার চিন্তা। ফলে এ ব্যাংকের সবকিছুতেই আর্থিক সূচকে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
প্রশ্ন: ঋণ না দিয়ে ব্যবসায়ীদের ফাইল ঘুরানোর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টিকে অপনি কিভাবে দেখছেন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: অনেকেই ঋণ চাইবে কিন্তু ঋণ চাইলে কি ঋণ দেয়া যাবে। তার সব এবিলিটি থাকতে হবে। অনেক ব্যাংক খারাপ হওয়ার কারণ হলো যাছাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দিয়ে থাকে। ফলে কিছুদিন যাওয়ার পরে সেই গ্রাহক অর্থ ফিরত দিতে পারে না। তারপর খেলাপি হয়ে যায়। আমরা সব কিছু যাছাই-বাছাই করে ঋণ দিয়ে থাকি। খুব সহজে খেলাপি হবে না। এছাড়া আমানত রাখার সময়ও একই কাজ করা উচিত আমানতকারীদের। ব্যাংকের মুনাফা দেখে আমানত রাখা ঠিক না। ব্যাংকের ‘ক্রেডিট রেটিং’ দেখে আমানত রাখা উচিত। ‘ক্রেডিট রেটিং’ ব্যাংকগুলোর আমানতের মুনাফা একটু কম হয়ে থাকে। কিন্তু আমানত নিরাপদ থাকে।