ডিসিসিআই প্রতক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে সংকোচনমূলক অবস্থান বেসরকারিখাতে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আরো নমনীয় মুদ্রানীতি গ্রহণ, ভারসাম্যপূর্ণ আর্থিক নীতি গ্রহণ, মুদ্রাস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির উপর এর প্রভাব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্যাবসায়ীরা। যার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়বে বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

এছাড়াও, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী দিনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করে ডিসিসিআই। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে নীতি সুদ হার ১০% রাখার পাশাপাশি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বজায় রাখায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করছে ডিসিসিআই।

সোমবার মুদ্রানীতি ঘোষণার পর ডিসিসিআই থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ডিসিসিআই জানায়, বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে, এ কঠোর অবস্থানের উদ্যোগ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বিনিয়োগের জন্য দেশের বেসরকারিখাত ব্যাংকগুলোর উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে থাকে, তবে উচ্চ সুদের হার পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হতে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমে আসা সত্ত্বেও, এটি কাঙ্খিত মাত্রায় নামেনি বলে হতাশা প্রকাশ করে সংস্থাটি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ডিসিসিসিআই, জানুয়ারি-জুন ২০২৫ সালের জন্য বেসরকারিখাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৮ শতাংশে অপরিবর্তীত রাখার সিদ্ধান্ত বেসরকারিখাতকে কিছুটা আশাহত করেছে, যদিও ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৩শতাংশ, যা বিগত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অপরদিকে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সরকারিখাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ২শতাংশ হলেও, তা বেড়ে ১৮ দশমিক ১শতাংশে পৌঁছেছে, এটি মোকাবেলায় সরকারকে কৃচ্ছতা সাধনের দিকে আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন, অন্যথায় বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ আরো হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে। বেসরকারিখাতের আস্থা ও ব্যবসায়িক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারের জন্য এ খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই দ্বি-অঙ্কের ঘরে থাকা প্রয়োজন। নিয়ন্ত্রণমূলক আর্থিক নীতিমালার কারণে অথনীতিতে স্থবিরতা তৈরির ঝুঁকি মোকাবেলায় ঢাকা চেম্বার ঋণের প্রবাহ বাড়াতে খাত-ভিত্তিক তহবিল এবং উদ্যোক্তা সহায়তা কর্মসূচি চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার ভিত্তিক বিনিময় হার প্রয়োগ করেছিল, তথাপি আমদানি-রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন দরে উচ্চ মূল্যে ডলার ক্রয় করতে হচ্ছে। এ অসঙ্গতি অবশ্যই সমাধান করতে হবে, যার মাধ্যমে ব্যবসায়ী, রেমিট্যান্স যোদ্ধাসহ সব স্টেকহোল্ডাররা উপকৃত হবেন। ঢাকা চেম্বার তারল্য সংকট এবং ক্রমবর্ধমান মন্দ ঋণ মোকাবেলায় আর্থিক খাতের প্রশাসনিক কার্যক্রম আরো শক্তিশালী করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। যদিও ২০২৭ সাল হতে আইএফআরএস ৯ এর অধীনে ইসিএল পদ্ধতি গ্রহণ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, সুশাসন বাস্তবায়নে মনোনিবেশের অভাব রয়েছে বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার। দেশের আর্থিক খাতে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামোর অনুপস্থিতি ও আইনি সমাধানের দীর্ঘসূত্রিতা আমাদের ব্যাংক খাতকে আরো দুর্বল করে তুলবে, যা বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করবে।