# সামান্য বেড়েছে মজুরি
বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে এরপরও অসহনীয় মাত্রার মূল্যস্ফীতি নিয়ে বছর শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি। খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি উভয়টি এখনো দুই অংকের ঘরে রয়েছে। জাতীয়ভাবে ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশে। যা তার আগের মাসে ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশে। যা তার আগের মাসে ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। খাদ্য বর্হিরভূর্ত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যদিও আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশে নামিয়ে আনার যে ঘোষণা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দিয়েছেন, সেটা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সরকারি হিসাবে বাজারে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে। অন্যদিকে মজুরি কিছুটা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি কমা এবং মজুরি বাড়ার অর্থ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকা। তবে যতটুকু সামঞ্জস্য হয়েছে, তাতে স্বস্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। কারণ যে হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সে হারে বাড়েনি মজুরি। এ দুইয়ের মাঝে ব্যবধান এখনো অনেক বড়। ফলে আয়-ব্যয়ের এই ব্যবধান ঘোচাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ।
সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির যে হালনাগাদ তথ্য দিয়েছে, সে অনুযায়ী, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়া এবং খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকায় ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা নভেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বিবিএস জানায়, গত ডিসেম্বর শেষে খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও কমেছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নভেম্বরের ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে এ হার নভেম্বরের ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ থেকে সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে, যা গত নভেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা গত নভেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে পৌঁছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত নভেম্বরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে। তবে এটি নয় শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি তা সাত শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশে নেমে আসবে।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মজুরি হার সূচক অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে সামান্য বেড়েছে মজুরি হার। এ মাসে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা নভেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ১০ শতাংশ; যা এর আগের মাসে অক্টোবর ২০২৪ ছিল ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে অতি সামান্য মজুরি বৃদ্ধি সাধারণ ও শ্রমিক পরিবারে কোন প্রভাব ফেলছে না বা তাদের কোনো কাজে আসছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষি খাতে মজুরি হার সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। শিল্প খাতে মজুরি হার সামান্য বেড়ে ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা নভেম্বর মাসে ছিল ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সেবা খাতেও সামান্য বেড়ে মজুরি হার হয়েছে ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা নভেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে বিপাকে পড়ছে। একেক দিন একেক নিত্য পণ্যের একেক রকম দাম। ফলে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে ভিড় বাড়ছে টিসিবির ট্রাক সেলে। মধ্যবিত্তরা আছে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায়। তারা কারো কাছে হাত পাততে পারছেন না, আবার সইতেও পারছেন না।