জনস্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল চাইছেন ঢাকার জমি মালিকরা। তারা বলেন, যে ড্যাপ কৃষি জমি ধ্বংস করে, জলাধার ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনে সেই ড্যাপ বাতিল চাই। আমাদের দাবি আদায় না হলে রাজপথ ছেড়ে যাব না।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল সোয়া ৯টা থেকে রাজউকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে এসব দাবি জানান তারা। এ সময় তাদের পক্ষে সহমত জানাতে ভূমি মালিক, প্রকৌশলী, আবাসন খাত সংশ্লিষ্টসহ কয়েক হাজার ব্যক্তি সেখানে অবস্থান নেন।
বৈষম্যমূলক ড্যাপ বাতিল ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে জমির মালিক ডা. মুস্তাফিজুর বলেন, পতিত সরকারের কতিপয় দোসরদের প্রেসক্রিপশনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তড়িঘড়ি করে দেশের স্বার্থবিরোধী বেআইনী ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ প্রকাশ করা হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেড়ে নেওয়া হয় ঢাকা মহানগরের ভবন নির্মাণের অধিকার। নগরবাসীর মধ্যে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করা হয় চরম বৈষম্য। যার ফলে কৃষিজমি দ্রুতগতিতে কমছে। এই বৈষম্যমূলক ড্যাপের জন্য এখনও পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাবাদী কয়েকজন নগর পরিকল্পনাবিদ মায়াকান্না করে বেড়াচ্ছেন নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য। তারা একটি মহলের হয়ে ঢাকা থেকে নাগরিকদের বের করে দিতে চাচ্ছেন।
লিখিত বক্তব্যে ভূমি মালিক চঞ্চল বলেন, আবাসন খাত ধ্বংস হলে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে এবং বহু লোক বেকার হবেন। ড্যাপের কারণে নির্মাণ খাত এরইমধ্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে, বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে, লিংকেজ প্রতিষ্ঠানগুলো স্থবির হয়ে যাচ্ছে। অতএব এই বেআইনি ড্যাপ অতি দ্রুত বাতিল করে জনবান্ধব নতুন ড্যাপ প্রণয়ন করতে হবে।
ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ বলেন, ড্যাপে ফার কমিয়ে দেওয়ার ফলে ভূমি মালিকরা ভবন নির্মাণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে পাড়া-মহল্লার রাস্তাঘাটগুলো অপ্রশস্তই থেকে যাচ্ছে এবং ফাঁকা জায়গা, সেমিপাকা জায়গা, পুরাতন জরাজীর্ন ভবনগুলো অস্থাস্থ্যকরই থেকে যাচ্ছে। সেখানে মাদকসেবন এবং অবৈধ কার্যকলাপসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়কর ও অসামাজিক কাজ হয়ে থাকে। এক কথায় ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশ এলাকাকে অপরিকল্পিত রেখে নগরবাসীকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের বিপর্যয় হবে অন্যদিকে নগরবাসীও আবাসনের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
তিনি বলেন, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা ব্যতীত ঢাকা শহরের সব জায়গায় ভবন তৈরির ক্ষেত্রে উচ্চতা এবং আয়তন প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে জনগণের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়। কুচক্রী মহলটি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ভূমি মালিকদের নিঃস্ব করে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির পাঁয়তারা করছে।
ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক লিজা বলেন, আমরা বহুবার বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি, আবেদন-নিবেদন করেছি। কিন্তু আমাদের কান্না কেউ শুনছে না। জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও আমরা আজ মৌলিক অধিকারের অন্যতম আবাসন তৈরির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আমাদের যেহেতু জমির স্বল্পতা আছে, সেই বিবেচনায় ঢাকা মহানগরের ড্যাপ ২০২২-৩৫ এর বিতর্কিত বিধি-বিধানগুলো স্থগিত করে ঢাকা মহানগরের মহল্লাগুলোর রাস্তা প্রশস্তকরণ ও জনস্বার্থে মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি-বিধান অনুসারে ভবন নির্মাণের অনুমতি দিতে হবে।
সমন্বয়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রেজাউল ইসলাম বলেন, পরিতাপের সঙ্গে সমবেত হয়েছি। দেশের আইন হয় জনস্বার্থে, জনস্বার্থ পরিপন্থি হলে হয় না। প্ল্যান অনুমোদন নিতে হয়, নকশা নিতে একেক সময় একেক আইন করা হয়। প্রকৃত অবস্থা দেখে আইন করে না। অন্যদের কথায় করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গুলশান, বারিধারায় এক আইন আর অন্য এলাকায় আরেক আইন- এটা হয় না। ২০০৮ সালের যে আইন কার্যকর ছিল সেটাই যথাযথ ছিল। বিনা টাকায় নকশা হয় না, নকশার জন্য আবেদন করা হলে এক মাসের মধ্যে পাশ করা সম্ভব। কিন্তু টাকা না হলে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়। সব পড়ে থাকা নকশার আবেদন এক মাসের মধ্যে দিতে হবে।
এসময় বেশ কিছু দাবি পেশ করা হয়। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. বৈষম্য ও অসঙ্গতিপূর্ণ ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
২. জলাধার আইন ভঙ্গ করে প্রণীত ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৩. স্বৈরাচার আমলে প্রণীত বৈষম্যমূলক ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৪. কৃষিজমি ধ্বংসকারী ড্যাপ বাতিল করতে হবে।
৫. জনস্বার্থ বিরোধী ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৬. পতিত সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৭. বন্যাপ্রবাহ এলাকা ভরাটের লাইসেন্সকৃত ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৮. পতিত সরকারের দোসরদের স্বার্থে পরিকল্পনাবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদ দ্বারা সম্পাদিত ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিল করতে হবে।
৯. ২০০৮ এর নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণের সুযোগ দিতে হবে।
১০. আগের নিয়ম অনুয়ায়ী বাড়ির উচ্চতা ও ঢাকা শহরের রাস্তার প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ২০ ফুট হওয়া চাই।
১১. বৈষম্যমুক্ত দেশ চাই এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে চাই।