ঢাকায় গণপরিবহণ সংকট চরমে, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

গত কয়েকদিনের মতো আজও ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বাসের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিবহণ সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী ও কাজে বের হওয়া সাধারণ মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, আব্দুল্লাহপুর, কুড়িল, বসুন্ধরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল এবং পল্টন এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন অপেক্ষমাণ শত শত যাত্রী, অথচ দেখা নেই বাসের। যে দু-চারটি বাস যাচ্ছে তারও গেট লাগানো এবং যাত্রীতে ঠাসা, ওঠার নেই কোনো উপায়। এ অবস্থায় উপায় না পেয়ে অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কেউবা অটোরিকশা, কেউ কেউ রাইড শেয়ারিং বাইকে করে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে বাস না চললেও ঢাকার মেরুল বাড্ডা এবং রামপুরা ব্রিজের শেষ প্রান্তে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কেন তারা রাস্তায় নামেনি জানতে চাইলে ভিক্টর বাসের হেলপার করিম বলেন, নতুন নিয়মানুযায়ী বাস গোলাপি রঙ করতে অনেক বাসই নামেনি রাস্তায়। আর ই-টিকিটিং চালু হলে ড্রাইভার-হেলপার ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই বাকিরাও বাস নিয়ে রাস্তায় নামেনি।

গত সপ্তাহে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর রুটে চলাচল করা বাস গোলাপি রং করে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। প্রাথমিকভাবে ২১ কোম্পানির দুই হাজার ৬১০ বাস গোলাপি রঙের ই-টিকিটিংয়ের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এরপর থেকেই মূলত গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহণের কৃত্রিম সংকট দেখা গেছে।

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড মোড় থেকে মহাখালী যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জগন্নাথ। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, কিন্তু বাস নেই। অফিস টাইমে শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন, যে অল্প সংখ্যক বাস আসছে সেগুলো যাত্রীতে ঠাসা, ওঠা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পরে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে রাইড শেয়ারিং বাইকে অফিসে যাচ্ছি।

একইভাবে রাজধানীর সুবাস্তু থেকে যমুনায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন নিরব হিলাল নামের এক যুবক। তিনি বলেন, বাসের রং পরিবর্তন করে টিকিট সিস্টেম হওয়ার কারণে অনেকেই বাস নামাচ্ছে না সড়কে। তাই গণপরিবহণ সংকট। কাজে বের হওয়া হাজার হাজার মানুষ সড়কে এসে ভোগান্তিতে পড়েছে। যারা ইচ্ছে করে যাত্রীদের এমন ভোগান্তিতে ফেলে বাস নামায়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। মানুষের এমন ভোগান্তি দেখে রিকশা, সিএনজি, রাইড শেয়ারিং বাইক সবাই অতিরিক্ত ভাড়া চাইতে শুরু করেছে।

গত সপ্তাহে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর রুটে রাজধানীতে চলাচল করা বাস গোলাপি রঙ করে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। প্রাথমিকভাবে ২১ কোম্পানির দুই হাজার ৬১০ বাস গোলাপি রঙের ই-টিকিটিংয়ের আওতাভুক্ত করা হলেও আগামীতে এ সংখ্যা এবং রুটের পরিধি আরও বাড়বে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

রঙ করার এ কার্যক্রমে দুই দিন ধরে আব্দুল্লাহপুরের এই রুটে রীতিমতো বাস সংকট দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ট্রাফিক কার্যক্রম জোরদার করায় অনেকেই মামলার ভয়ে বাস নিয়ে বের হচ্ছেন না। অনেক ড্রাইভার-হেলপারদের দাবি করছেন ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

অনাবিল বাসের চালক রাসেদ বলেন, জায়গায় জায়গায় সার্জেন্ট আর চেকপোস্ট। রাস্তায় নামলেই শিওর মামলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাস নিয়ে নামা যাবে তখন।

এদিকে বাসের সংখ্যা কম থাকায় রাস্তায় বেড়েছে রিকশা আর বাইকের চলাচল। একদিকে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে বেপরোয়া বাইক- সব মিলিয়ে এই রুটে একটু পর পর সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পুরানা পল্টন যাবেন রওশন প্রধান। রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত হেঁটে এসে ভিড় ঠেলে কোনো রকমে রমজান বসে উঠেছেন। ভেবেছেন, কাকরাইল নেমে সেখান থেকে আবার হেঁটে পুরানা পল্টন যাবেন। কিন্তু ভয়াবহ যানজটের কারণে বাসটিকে চলতে হচ্ছে ঢিমেতালে। পরে মালিবাগ-মৌচাক নেমে আবার হাঁটা শুরু করেন তিনি।

সড়কে দুর্দশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় নেমে জানতে পারি ভিক্টর পরিবহণসহ কয়েকটি বাস চলছে না। যে কারণে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কিন্তু গাড়ি উঠেও দেখা যাচ্ছে সেটা চলছে না। এতে উভয়সংকটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

সড়কে যানজট এবং বাসের সংখ্যা কেন কম সে ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের উত্তরা জোনের সহকারী ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) ফজলুল করিম বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আমরাও বাসের সংখ্যা কম পেয়েছে। কিন্তু কী কারণে রাস্তায় বাস কম সে ব্যাপারে এখনো পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অনেক বাস গোলাপি রঙের ই-টিকিটিং এর আওতায় আসতে চাওয়ায় রঙ করতে দেওয়া হয়েছে। এতে করে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বাস নেমেছে রাস্তায়।

বাড্ডা ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার শারমিন আক্তার বলেন, গোলাপি রঙের পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে অনেক বাসের হেলপার এবং ড্রাইভার ধর্মঘট করেছে। তাই তারা বাস নিয়ে রাস্তায় নামেনি। এতে করেও গণপরিবহণ সংকট দেখা দিয়েছে।

দ্রুত সমস্যা সমাধান করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আনফিট গাড়ি, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, বাড়তি ভাড়া রাখা বন্ধ করতে সরকারের শক্তিশালী মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।