ঢাকা শহরে যানজটের ভোগান্তি কমাতে ২০০৯ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১১ সালে এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৭ সালে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। আর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার চালু করে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রকল্পের বর্তমান অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ। মোট খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।
নানা সমস্যায় ধুঁকতে থাকা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত থাকলেও তা আবারও বাড়ানো হতে পারে। কেননা, গত ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে না।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের ৩১টি র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়ের ২০ কিলোমিটার ও র্যাম্পের দৈর্ঘ্য মিলিয়ে প্রকল্প দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার, যা এই প্রকল্পের বড় বেমানান দিক, মূল প্রকল্পের চেয়ে র্যাম্পের দৈর্ঘ্য বেশি। পিপিপি প্রকল্পে সাধারণ উদ্যোক্তা বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পুরো টাকা বিনিয়োগ করে। তবে এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পে কর্মব্যস্ত দিনের সকাল, বিকাল ও সন্ধ্যায় তীব্র যানজট থাকে। র্যাম্প বা ওঠানামার পথে যানজট মাড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উঠতেই অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। কাওলা, ফার্মগেট, বনানী পয়েন্টে নিত্যদিনই র্যাম্পের পয়েন্টেও তীব্র যানজট দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দর্শন থাকে কোনো শহরকে বাইপাস করা অথবা দুটো বড় শহরের মধ্যে দূরত্ব কমানো। যাতে দ্রুত এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করা যায়। এটা নিচের সড়ক বা উড়াল পথ দু’ভাবেই ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ঢাকা এলিভেটেড ক্ষেত্রে ‘বাইপাস’ না হয়ে ‘ওপেন পাস’ হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় আমরা যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দেখছি, এটা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এই ধরনের প্রকল্পের উদ্দেশ্যই থাকে টোল কালেকশন করা। সেই বিবেচনায় তারা এক্সপ্রেসওয়ের দর্শন না মেনে ইচ্ছামতো র্যাম্পের জাল ছড়িয়েছে। এটা দেখভালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
তিনি জানান, ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকল্পটি ৩ থেকে সাড়ে ৩ বছরে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা ১৫ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি (২০০৯-২০২৪)। এজন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা না থাকা বড় কারণ। এটাও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার ব্যর্থতা। কেননা, তাদের দায়িত্ব ছিল উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আর্থিক জটিলতা নিরসন হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু হবে এবং আগামী বছরের মধ্যে পুরো অংশ চালু করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, এই প্রকল্পটি নিয়ে কারিগরি অনেক বিতর্ক রয়েছে। এরপরও নগরবাসী এই প্রকল্প বাস্তবায়নে খুশি। তাতে বোঝা যায় প্রকল্প থেকে অনেক সুবিধা মিলছে। ৫ আগস্টের পর কিছুদিন এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। তখন নগরবাসীর পক্ষ থেকে পথটি খুলে দেওয়ার জন্য জোর দাবি উঠেছিল।