তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী সরকারের নতুন পদক্ষেপে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি), সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডর্‌প-এর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই বিশেষ সহকারীর সাথে আলোচনা সভা করে। উক্ত সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশ করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী একটি গোষ্ঠী রয়েছে, কারণ তামাক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর ২৪ থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স দেয় এবং তারা তাদের মুনাফা রক্ষা করতে চাইবে। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন ধূমপায়ী তৈরি না হওয়া। এজন্য আমরা দেশী ও বিদেশী গবেষণার ভিত্তিতে পাবলিক প্লেসে তামাক নিষিদ্ধ করার গুরুত্ব প্রচার করছি, যদিও সরাসরি তামাক নিষিদ্ধ করা এই দেশে বাস্তবসম্মত নয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসি-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।

তিনি জানান যে সিগারেটের প্যাকেটে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ সতর্কতামূলক ছবি এবং বড় আকারে বার্তা ছাপানো একমাত্র সমাধান হতে পারে না, কারণ দেশে সাধারণত মানুষ সতর্কতামূলক লেখা পড়লেও সচেতনতা অবলম্বন করে না। তাই এসব সতর্কীকরণকে সহায়ক উপায় হিসেবে ব্যবহার করে আরও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে কোনো পাঠ নেই, ফলে অনেক শিশু ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমাদের ধূমপানের অপকারিতাগুলোকে সাধারণ জ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে কমপক্ষে এক হাজার শিশু এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।

চলতি বছরের প্রথম দিনেই ই-সিগারেট/ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে গেজেট প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ডব়্প।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা অনুমোদন না দিয়ে ফেরৎ পাঠানো হয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশোধনীটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে অর্ডিন্যান্স আকারে পাশের জন্য সরকারের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া পরিমার্জনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ ১২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ পরিমার্জিত খসড়াটি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে উপস্থাপন করবে।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি, তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা এবং সংশোধনী আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জনস্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন তারা।

উল্লেখ্য, ডর্‌প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্‌প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।