দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন অতিশি

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পদত্যাগের পর দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন অতিশি মারলেনা। আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এ খবর দিয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অরবিন্দ কেজরিওয়াল পদত্যাগের আগে দলের নেতারা তাঁকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার ক্ষমতা দেন। তিনিই অতিশির নাম প্রস্তাব করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়।

৪৩ বছর বয়সী অতিশি কেজরিওয়ালের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ, রাজস্ব, পরিকল্পনা, অর্থ, পরিষেবা, ভিজিলেন্স, পানি ও জনসংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরসহ সর্বাধিক পোর্টফোলিও সামলেছেন।

গত আগস্টে নিজের অনুপস্থিতিতে অতিশিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলনের অনুমতি দিতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর (এলজি) ভি কে সাক্সেনাকে চিঠি লিখে সুপারিশ করেন কেজরিওয়াল। মন্ত্রিসভায় অতিশির তাৎপর্য তুলে ধরার পরও গভর্নর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কৈলাশ গাহলটকে পতাকা উত্তোলনের জন্য মনোনীত করেন।

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো কালকাজি নির্বাচনী এলাকা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন অতিশি। আবগারি নীতির মামলায় তৎকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পরে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তিনি মন্ত্রী নিযুক্ত হন। রাজধানীর প্রভাবশালী ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের মানুষ অতিশি।

সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিনে মুক্তি পান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে বেশ কিছু বিধিনিষেধ এবং শর্ত আরোপ করা হয় তাঁর ওপরে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে দুদিন আগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে কেজরিওয়াল বলেন, মানুষের রায়ে নির্বাচিত হলেই কেবল মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরবেন তিনি।

এর আগে গ্রেপ্তারের পরও মুখ্যমন্ত্রী পদ নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল, যা ভারতীয় রাজনীতিতে নজিরবিহীন। বিষয়টি ব্যাপক বিতর্ক হয়। কংগ্রেসসহ আম আদমি পার্টির জোট শরিকরাও এ নিয়ে সমালোচনা করেন।

এর আগে লোকসভা নির্বাচনের সময় দলের হয়ে প্রচার করার জন্য ইডির করা মামলায় কেজরিওয়াল জামিন পান। কিন্তু পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। তাঁকে ফের তিহাড় জেলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ওই গ্রেপ্তারকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। দুই দিন আগে তাঁকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়। তবে আদালত বেশ কয়েকটি শর্ত দেয়— কেজরিওয়াল কোনো ফাইলে সই করতে পারবেন না এবং নিজের দপ্তরেও যেতে পারবেন না এবং আবগারি মামলা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।

২০২১ সালের নভেম্বরে মদ বিক্রির নতুন নীতি কার্যকর করে কেজরিওয়ালের দিল্লি সরকার। তবে কয়েক দিন পরই সেই নীতি বাতিল করা হয়েছিল। এর মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, সেই নীতির অধীনে নির্দিষ্ট কিছু মদের কারবারি থেকে ঘুষ নিয়ে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডিলাররা মদ বিক্রির লাইসেন্সের জন্য আম আদমি পার্টিকে ১০০ কোটি টাকার ঘুষ দিয়েছিলেন। পুরো ঘটনায় তেলাঙ্গানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে কে কবিতার সরাসরি যোগ ছিল।

ইডির অভিযোগ, কবিতার মদদে দক্ষিণ ভারতে অনেক সংস্থা আম আদমি পার্টিকে ঘুষ দিয়ে দিল্লিতে মদ বিক্রির লাইসেন্স পেয়েছিল। এই লেনদেনের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এই মামলায় রাজসাক্ষী রেড্ডি। দিল্লি আবগারি দুর্নীতি মামলায় আম আদমি পার্টিকে ‘কোম্পানি’ আখ্যা দিয়েছিল ইডি। শুধু তাই নয়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এই ‘দুর্নীতির মাথা’ হিসেবে দাবি করা হয়।