বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) দেশের প্রাইমারী টেক্সটাইল খাতের সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল গত ৭ জুলাই সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি এ আহ্বান জানান। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থত ছিলেন। বৈঠকে তুলা ও সিন্থেটিক ফাইবার আমদানিতে আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর অবিলম্বে প্রত্যাহার, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মতো ১৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স পুনর্বহাল এবং কটন ও কৃত্রিম আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর আরোপিত কেজি প্রতি ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে বিটিএমএ জানায়, দেশে বর্তমানে ১৮৫৮টি সদস্য মিল রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে স্পিনিং, উইভিং ও ডায়িং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিল। প্রাইভেট খাতে প্রায় ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এই খাতে। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশেরও বেশি আসে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাত থেকে এবং এর ৭০ শতাংশই বিটিএমএ-সংশ্লিষ্ট শিল্প থেকে আসে। ফলে এই খাত আমদানি বিকল্প হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আরও পড়ুনঃ শুধু শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে : বিটিএমএ সভাপতি
বৈঠকে ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্প সরকারের প্রণোদনার ফলে কীভাবে ডাম্পিং মূল্যে বাংলাদেশে সুতা রপ্তানি করে এবং তার ফলে দেশীয় শিল্প কীভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে তা তুলে ধরা হয়। বিটিএমএ জানায়, তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অওঞ আরোপ করে সরকার একদিকে স্থানীয় উৎপাদককে নিরুৎসাহিত করছে, অপরদিকে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুতা আমদানিকে উৎসাহ দিচ্ছে। এর ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। প্রতিনিধিদল জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল পরিমাণ তুলা খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে, কিন্তু অওঞ জটিলতায় ডেমারেজ চার্জ বাড়ছে। এই চার্জ মওকুফ ও অওঞ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
বিটিএমএ সভাপতি জানান, আগে আরএমজি খাতে ১২ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স আরোপ করা হলেও প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতে তা ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে যা বৈষম্যমূলক। ২০২৮ সাল পর্যন্ত কর্পোরেট ট্যাক্স হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। তিনি বলেন, নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী মূলত দেশীয় কটন ও কৃত্রিম আঁশ মিশ্রিত সুতা দিয়ে তৈরি কাপড় ব্যবহার করে। এই কাপড়ের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ বিদেশি পণ্যের দিকে ঝুঁকবে এবং দেশীয় টেক্সটাইল মিল ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিটিএমএ সভাপতি জানান, সরকার গত ৭ জুলাই আয়কর প্রত্যাহারের বিষয়ে আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়নি। এতে প্রতিবেশী দেশগুলো লাভবান হচ্ছে এবং আমাদের শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়ছে। বিশ্বের কোথাও ইন্টারমিডিয়ারি কাঁচামালে শুল্ক আরোপ করা হয় না অথচ বাংলাদেশে সেটি করা হয়েছে। বর্তমানে শিল্পকারখানায় তীব্র জ্বালানি সংকট, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক নানা সংকটজনিত কারণে উৎপাদন খরচ ক্ষেত্রবিশেষে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, যা অর্থ উপদেষ্টা সরেজমিনে যাচাই করেছেন। এর ফলে স্পিনিং সেক্টর ভয়াবহ সংকটে রয়েছে।
এছাড়াও দেশে তুলা উৎপাদন না হওয়ায় বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করে সুতা উৎপাদন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তা সত্ত্বেও দেশীয় মিলগুলো সরকারের সহায়তায় ১০০ শতাংশ নিট গার্মেন্ট এবং ৫৫-৬০ শতাংশ ওভেন গার্মেন্টে সুতা সরবরাহে সক্ষমতা অর্জন করেছে। অতীতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বিনিয়োগ উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না করে প্রণোদনা দিয়ে টেক্সটাইল শিল্পকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্প রক্ষায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পর্যাপ্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সরবরাহ, ব্যবসাবান্ধব নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, ঋণ ঝুঁকিতে থাকা উদ্যোক্তাদের জন্য এক্সিট প্ল্যান, নতুন শিল্প খাতে বিনিয়োগে সহায়তা ও নীতি সহায়তা, রাজস্ব বাড়াতে নতুন করদাতার খোঁজÑ এসব পদক্ষেপ জরুরি।
পুরাতন ব্যবসায়ীদের ওপর কর বাড়িয়ে নয় বরং নতুন করদাতাকে কর নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করে রাজস্ব আদায়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতেই হবে—এটি এখন সময়ের দাবি। দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ চায় বিটিএমএ।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।