দেশের প্রায় ২০ লাখ মানুষ চোখের রোগ গ্লুকোমা সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে রোগটি নিয়ে সচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শনিবার (১৫ মার্চ) বাংলাদেশ গ্লকোমা সোসাইটির উদ্যোগে রাজধানীর সোবহানবাগে বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা।
সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, মানুষের শরীরে যেমন ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ থাকে, ঠিক তেমনি চোখেরও প্রেশার আছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ব্লাড প্রেশার যেমন থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি, তেমনি সাধারণত চোখের ভেতরের প্রেশার ১০ থেকে ২১ মিলিমিটার অব মার্কারি। এই প্রেশার যখন ২১ মিলিমিটারের উপরে চলে যায় তখন চোখের ভেতরে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চাপ যখন চোখের ভেতরের অপটিক নার্ভে চাপ দেয় তখন তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে আস্তে আস্তে। এর ফলে চোখে কম দেখা শুরু হয় এবং প্রেশারের কারণে অপটিক নার্ভ যত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তত ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এই সমস্যাটিই হচ্ছে গ্লুকোমা।
এদিন, সকাল ১০টায় গ্লকোমা সোসাইটির অফিস ধানমন্ডির হারুন আই ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্প, বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. শাহাবউদ্দিন। একইসঙ্গে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিনামূল্যে চক্ষু রোগী দেখা হয়।
পরে দেশের জনসাধারণের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ধানমন্ডিতে আলোচনা সভা ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় গ্লকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ, হারুন আই ফাউন্ডেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পারিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ এম এ মান্নাফ রোগের সচেতনতামূলক বক্তব্য দেন। হারুন আই ফাউন্ডেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. জুয়েলা নাসরিন অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গ্লকোমা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা সহীদ। সভাপতি রোগর গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণমাধ্যমকে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান এবং এই রোগ প্রতিরোধে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জিননুরাইন (নিউটন) গ্লুকোমা রোগের ভয়াবহতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বক্তব্য দেন।
আলোচনা সভায় অধ্যাপক এম নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক ডা. মো. আরিফ মিয়া, ডা. এম জিয়াউল করিম ও অধ্যাপক ডা. হাসান শহীদ এই রোগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এছাড়া সভায় গ্লুকোমা সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান গ্লুকোমা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।