শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের পথে রয়েছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চেনা পরিবেশে নতুন পরিচয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি। দীর্ঘদিনের পরিচিতজনদের সামনে তুলে ধরবেন তার নতুন দায়িত্ব অর্থাৎ বাংলাদেশকে।
জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা করেছেন ড. ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা। নিউইয়র্কে ড. ইউনূসে আগমন ঘিরে এখানকার বাঙালি কমিউনিটিতেও বেশ উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান নিয়ে বেশ আলোচনা রয়েছে।
নিউইয়র্কে সফরকালে তিনদিন বেশ ব্যস্ত সময়ই পার করবেন। এর মধ্যে নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। আর জাতিসংঘ অধিবেশনে ২৭ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য বলছে, ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার টেবিলে থাকবে নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণের সংস্কার ইস্যুও। পাশাপাশি আঞ্চলিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে, সেটি নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন ড. ইউনূস।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এ বছরই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশ একটি উচ্চ-পর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের প্রধানের পাশাপাশি জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, কিছু সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধান অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আয়োজক দেশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে বাইডনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় দেখা করার সুযোগ হবে ড. ইউনূসের।
জাতিসংঘ অধিবেশনে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বক্তৃতা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, নিউইয়র্কে অবস্থানকালে বাইডেনের পাশাপাশি নিউইয়র্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস।
এছাড়া, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক সামান্থা পাওয়ার, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।