মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, যারা নদীতে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন, তাদেরকে আমি জেলে বলতে রাজি নই। তারা অপ্রকৃত জেলে, তারা ব্যবসায়ী, তারা দুর্বৃত্ত। তাদেরকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করব না।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে ভোলা সদরের ভোলারখাল এলাকায় ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৪’ উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, আল্লাহ ইলিশ আমাদেরকে সম্পদ হিসেবে দিয়েছেন। ইলিশকে কোনো খাবার দিতে হয় না। আমরা শুধু ইলিশকে নির্বিঘ্নে ডিম পাড়তে দেওয়া এবং জাটকা যাতে একটু বড় হতে পারে এমন একটা কিছু করতে দিলেই ইলিশ আমাদেরকে বিশাল একটা আন্তর্জাতিকভাবে নাম্বার ওয়ান সম্পদ দিচ্ছে। তাই সবাইকে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার আহ্বান জানাই।
চীনে প্রতি কেজি ইলিশ প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, চীনে এত দামে প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে হয়, তারপরও তারা ইলিশ পায় না বলে হা-হুতাশ করেন। অথচ আমাদের পর্যাপ্ত ইলিশ রয়েছে। ইলিশ সম্পদকে রক্ষা করলে বাংলাদেশের মানুষ তথা ভোলার মানুষ গরিব থাকবে না। কেন আমরা গরিব থাকব, আমাদের এত বড় সম্পদ আছে।
অভিযানের মধ্যে বাংলাদেশের জলসীমায় মিয়ানমার ও ভারতের ট্রলার এসে মাছ ধরে নিয়ে যায়- জেলেদের এমন অভিযোগের বিষয়ে ফরিদা আখতার বলেন, আমাদের কোস্টগার্ড নৌবাহিনী ও নৌপুলিশ এ বিষয়টি দেখবে। অভিযানে শুধু আমাদের জেলেদের ধরলে হবে না। যারা বাহিরের থেকে আসে তাদের কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশের জলসীমায় এসে মাছ ধরার। তারা এটা করতে পারেন না। কাজেই তাদেরকে ধরে এখান থেকে বিতাড়িত করতে হবে। কোনো বৈষম্য চলবে না।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের মধ্যে জেলেদেরকে সরকারি প্রণোদনা ২৫ কেজি চালের সঙ্গে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তায় প্রদানের দাবি তুললে তিনি জেলেদের উদ্দেশে বলেন, আমি ঢাকায় ফিরে আপনাদের এ দাবিটি গুরুত্ব সহকারে দেখব। এ জন্য আমাদেরকে সময় দিতে হবে।
জেলেরা আড়তদার ও মহাজনের দাদন প্রথা থেকে মুক্তির জন্য সরকারিভাবে স্বল্প সুদে ঋণের দাবি জানালে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন জেলাতে গিয়েছি। জেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। জেলেদের দাবি হলো স্বল্প সুদে ঋণ। জেলেদের এ দাবিটি সরকারকে বলা শুরু করেছি। জেলেদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ ব্যবস্থা করতে না পারলেও যেন স্বল্প সুদে ঋণ ব্যবস্থা করা হয়। কারণ জেলেদের বছরে তিন বার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকতে হয়। ইলিশের প্রয়োজনেই জেলেদের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকতে হয়। এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদেরকে অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
ভোলার মহিষের কাঁচা টক দই প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ভোলাবাসী ভাগ্যবান। ভোলার মহিষের দুধের দই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। জেলেদেরকে মাছ ধরার পাশাপাশি লাভজনক হওয়ায় মহিষ পালনের উপদেশও দেন তিনি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদা আখতার বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জন্য একটি বিশেষ ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়েছে। সেই ফাউন্ডেশন থেকে শহীদদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যদি বিদেশও নিতে হয় তাহলে সে ব্যবস্থাও করবে সরকার। এ সরকার তাদের রক্তের কাছে ঋণী।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহামুদ বেলাল হায়দার, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, ভোলার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল হক, কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শাহীন মাজিদ, নৌবাহিনীর ভোলা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আবু বকর সিদ্দিক, ইলিশ সম্পদ প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব, জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ও জেলে নেতা মো. বশির।