নাগরিক ঐক্যের সাথে জাতীয় কবিতা পরিষদের মতবিনিময়

একটি বৈষম্য মুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জাতীয় কবিতা পরিষদ জাতীয় পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রয়াসে যৌথ মতবিনিময় সভার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ মে  বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জননেতা মাহমুদুর রহমান মান্না–এর নেতৃত্বাধীন ‘নাগরিক ঐক্য’–এর সঙ্গে এক বিশেষ মতবিনিময় সভা নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ২২/১ তোপখানা রোড (বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ ভবন), ৪র্থ তলায় অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান, সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর কাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফেরদৌসি আক্তার, জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য কবি মতিন বৈরাগী, পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি শ্যামল জাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক কবি নুরুন্নবী সোহেল, সেমিনার সম্পাদক কবি মনজুরুর রহমান, শান্তি ও শৃঙ্খলা সম্পাদক কবি ইউসুফ রেজা, প্রচার সম্পাদক কবি আসাদ কাজল, দপ্তর সম্পাদক কবি রোকন জহুর, জনসংযোগ সম্পাদক রফিক হাসান, কবি শিমুল পারভীনসহ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

মতবিনিময় সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন, মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা জোরদার করা।

সভার শুরুতেই জাতীয় কবিতা পরিষদের সংগ্রামী ইতিহাস তুলে ধরেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। আলোচনায় মোহন রায়হান বলেন- যে যখন ক্ষমতায় আসে সে তখন শিল্প সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেয় না বরং সবকিছুকে দলীয়করণ করতে চায়। ফলে এক দলীয় শাষণ বা স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়।’ তিনি তার একটা কবিতার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন- আমাদের অশিক্ষিত নেতারা সংস্কৃতি বোঝেনা বরং নির্বাচন ভালো বোঝে।’ যুগে যুগে লেখক, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র পরিচালনার দিশা দিয়েছে। জাতীয় কবিতা পরিষদ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।’

আসাদ কাজল বলেন- সংস্কার ও নির্বাচন উভয় বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিৎ।

কবি মতিন বৈরাগী বলেন- কবিরা স্বার্বভৌম। রাজনীতির সাথে সংস্কৃতি সরাসরি জড়িত। সত্যিকারের কবিরা কখনো দলীয়করণ হয় না। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন রাজনৈতিক দলেরই কোন সাহিত্য অঙ্গ থাকে না। কবিরা রাজনীতির অধিন নয় বরং কবিরা রাজনীতিকে জন্ম দেয়, পরিশুদ্ধ করে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন- একটা গ্রহণযোগ্য ভালো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু করে তাড়াতাড়িই নির্বাচনে দেয়া উচিৎ। ভেতরে জাতীয় আন্তর্জাতিক অনেক গেইম আছে বা থাকতে পারে। গণতন্ত্র মানে মেজরিটির মতামত নয় বরং তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সত্যের সাথে থাকা।
যতটা সম্ভব ক্ষমতার ডিসেন্ট্রালাইজেশন করা যেন কেউ একক ক্ষমতার অধিকারী না হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত দেশে কয়েক মাসে শুধুমাত্র আলোচনা আর কাগজে লেখাই হয়েছে আদতে কোন সংস্কারই হয়নি। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বা নেতাদের সাথে আলোচনা করতে যতটা সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ততটা আগ্রহ তিনি দেশীয় মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলের সাথে বসতে দেখান না।’ তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদের সাথে কার্যকরী মিথস্ক্রিয়া তৈরি হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সর্বোপরি মতবিনিময় সভায় দেশের সার্বিক অবস্থা ও করণীয় নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়।