প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনটি আমল করা উত্তম। এর মাধ্যমে আমলের পাল্লা ভারী হবে এবং একজন মানুষ আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হতে পারবেন। আমল তিনটি হলো—
আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাঁধা থাকবে না। (নাসাঈ, হাদিস, ৯৪৪৮; তাবারানি, হাদিস : ৭৮৩২)
আয়াতুল কুরসি আরবি :
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ :
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।
আয়াতুল কুরসির অর্থ :
আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁকে সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।
তাসবিহ পাঠ
নামাজের পর সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার করে মোট ৯৯ বারও পাঠ করা যায়। প্রত্যেক সালাতের পর এই আমল করার মাধ্যমে জিহাদের সমান সওয়াব লাভ করা যায়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, দরিদ্র লোকেরা নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাঁদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তাঁরা আমাদের মতো সালাত আদায় করছেন, আমাদের মতো সিয়াম পালন করছেন এবং তাঁরা তাঁদের অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে হজ, ওমরাহ, জিহাদ ও সদকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। কেউ তোমাদের সমপর্যায়ে উপনীত হতে পারবে না। আর লোকদের মধ্যে তোমরাই হবে উত্তম আমলকারী, তবে যে ব্যক্তি এ ধরনের আমল করবে তার কথা ভিন্ন। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার করে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবির (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৪৩)
কালিমা শাহাদাত পাঠ
অনেক হাদিসে কালেমা শাহাদাতের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। নিয়মিত এই কালেমা পাঠের ফলে কিয়ামতের ময়দানে মুক্তি পাওয়া যাবে।
কালিমা শাহাদত আরবি :
اشْهَدُ انْ لّآ اِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً اعَبْدُهوَرَسُولُه
কালিমা শাহাদতের বাংলা উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
কালিমা শাহাদতের বাংলা অর্থ : আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক। তাঁহার কোন অংশীদার নেই, এবং আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ্র প্রেরিত বান্দা ও রাসূল।