সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীকে পরিপূর্ণভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি।
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ‘না’ ভোটের প্রস্তাব করেছি। সংসদে উচ্চকক্ষের কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদ থাকতে পারবেন, আমরা সে কথাও বলেছি। সংসদে উচ্চকক্ষের নির্বাচনের প্রস্তাব করেছি। এ রকম আমরা অনেক বিষয়ে প্রস্তাব করেছি।’’
‘আরও প্রস্তাব করেছি, রাজনৈতিক দলের বিষয়ে অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক বিষয়গুলোসহ রাজনৈতিক দলের স্বচ্ছতা-জবাবদিহি ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের মতামত পেশ করেছি। মনোনয়নের ক্ষেত্রে তারা নিজের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তিনজনের একটা প্যানেল তৈরি করতে পারে। তারা প্রত্যেকে কনস্টিটিউটে তিনজনের প্যানেল তৈরি করে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠাবে। সেই প্যানেল থেকেই মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দেবে বা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে’-বলেন ড. মজুমদার।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থেকে প্রদেশ কিংবা ৩০০ আসনের পরিবর্তে ৫০০ আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা প্রদেশ করার বিষয়ে বলিনি। আমরা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রস্তাব করেছি। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সংসদে আসন ৪০০-এ উন্নীত করার কথা আমরা বলেছি। ৪০০-এর মধ্যে ১০০ আসন হতে হবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব প্রসঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অবশ্যই আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব করেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আমি আদালতে গিয়েছি। এ ব্যাপারে আদালতে রায় হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সংশোধনী বাতিল করা হবে। আপিল বিভাগে একটা রিভিউ পিটিশন আছে। যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে তার রিভিউ করার ব্যাপারে আমরা দরখাস্ত করেছি। আমরা আশা করি যে, আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাব এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসবে।’
অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া না দেওয়া প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনে যারা ভোট দেবে তারা নারী-পুরুষ এবং সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষ- সবাই যেন এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। কেউ যেন বাদ না পড়ে।’
‘আর আওয়ামী লীগের ব্যাপারে বলব, এটা আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনই নির্ধারণ করবে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি পারবে না। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীকে পরিপূর্ণভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে’-বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি নিয়ে বদিউল আলম বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে বলব, দলগুলো দুই দিকেই যুক্ত আছে এবং এই দুই দলেরই মতামত এখন এক জায়গায় পৌঁছতে হবে। আমি আশা করি যে, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং তা সফল হবে। এর মাধ্যমে কতগুলো বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত্তিতে গণ-আদেশের মাধ্যমে সংশোধন হবে।’
ভোটবিমুখ অবস্থা থেকে মানুষকে নির্বাচনমুখী করার ক্ষেত্রে কী কী উপায়-এমন প্রশ্ন ছিল সংস্কার কমিশন প্রধানের কাছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে এ অবস্থা দূর করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। অর্থাৎ নির্বাচনব্যবস্থা কোনোভাবেই কার্যকর হবে না।’
‘মানুষের ভোটের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। তাই নির্বাচনে জনগণ যেন তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সেটি আমাদের দেখতে হবে। আমরা আমাদের সংস্কার প্রস্তাবে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সর্বতোভাবে উৎসবমুখর নির্বাচনি ব্যবস্থা গড়ে তোলার সপক্ষে মতামত দিয়েছি। নিজে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটদানের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ আবারও নির্বাচনমুখর হয়ে উঠবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা’-যোগ করেন ড. মজুমদার।