পদ্মা ব্যাংকে আমানত রেখে নিঃস্ব, ফেরতের দাবিতে ফুঁসছেন ভুক্তভোগীরা

তিল তিল করে জমানো কষ্টের টাকা নিরাপদ মনে করে পদ্মা ব্যাংকে রেখেছিলেন গ্রাহকরা। কিন্তু এখন সেই টাকা ফেরত না পেয়ে দিশেহারা আমানতকারীরা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় একটি চক্র ব্যাংকটিকে লুটেপুটে খেয়েছে, এখন নিঃস্ব সাধারণ মানুষ।

শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা তাদের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অর্থ ফেরতের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ রোডম্যাপ দাবি করেন। সেইসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত, অভিযুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, পাসপোর্ট বাতিল ও সম্পদ জব্দের দাবি তোলেন। তারা বলেন, এসব দাবি না মানলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন।

সংবাদ সম্মেলনে মো. ইব্রাহিম বলেন, আমরা শুধু আমাদের দুঃখ প্রকাশ করতে আসিনি, আমরা এসেছি দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংকিং দুর্নীতির চিত্র জনসমক্ষে তুলে ধরতে। আমাদের হাজার হাজার পরিবার, যাদের সঞ্চয়, পেনশন এবং ব্যবসার টাকা লোপাট করা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে মাত্র একটি চক্রের মাধ্যমে। তিনি প্রশ্ন তোলেন—এই অনিয়মের পরও কীভাবে তারেক রিয়াজ খান পদত্যাগের সময় অনাপত্তিপত্র পান? কেন এখনো তিনি ব্যাংকিং খাতে সক্রিয়? এবং কেনো তার সহযোগীরা এখনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকে দায়িত্বে রয়েছেন?

মার্জিয়া আক্তার নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, তার বাবা পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখেছিলেন। এখন তার মা কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিন্তু ব্যাংকে টাকা থাকলেও মাসের পর মাস ধরে তা তোলা যাচ্ছে না। কর্মকর্তারা বারবার সময় নিচ্ছেন, আজ-কাল বলে পার করে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছি বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য। আমাদের আর সহ্য হচ্ছে না। গভর্নর স্যার, দয়া করে আমার মাকে বাঁচান, আমাদের টাকা ফেরত দিন।”

জুয়েলা আক্তার বলেন, তিল তিল করে জমানো টাকা আমরা ব্যাংকে রেখেছিলাম। এখন নিজেদের টাকাই তুলতে পারছি না। অনেক সময় ব্যাংকে গেলে দুর্ব্যবহার করা হয়, ধমক দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এই যন্ত্রণার শেষ কোথায়?

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাত দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছুটা আশার আলো জাগলেও তিনি পরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের ৬৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন। বিনিয়োগ আনার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করে বরং নিজেই আর্থিক অনিয়মে জড়ান। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন এবং ব্যাংক থেকে সম্পদ লুট করতে থাকেন।

ফয়সাল ভূঁইয়া বলেন, এই দুর্নীতির মূল হোতা চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তারেক রিয়াজ খান। তারা ভুয়া নথির মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন, অনুমোদন ছাড়াই ঋণ বিতরণ এবং প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৯ সালে ব্যাংকে তারেক রিয়াজের যোগদানের সময় যেখানে ব্যাংকের হাতে ছিল ১২০০ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে তার পদত্যাগের সময় ব্যাংকের অবস্থান দাঁড়ায় ঋণাত্মক ৪০০ কোটি টাকায়।

সংবাদ সম্মেলনে মিরাজুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “ব্যবসার সব টাকা ব্যাংকে রেখেছিলাম। এখন আমরা পথে বসেছি। অফিসে অফিসে ঘুরেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।

ভুক্তভোগীরা বলেন, এই সংকটের দায় এড়াতে পারে না বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ লাইসেন্স দিয়েছে তারা। তাই তাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা আশা করেন, দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।