সোনালী ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা

ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এমডি অ্যান্ড সিইও মো. শওকত আলী খান। সাথে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

# পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৭৯১ কোটি, আমানত ১৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা

# ব্যাংকের খেলাপি আদায়ে জোরালো পদক্ষেপ

# এসএমইখাতে বিশেষ নজর

আগের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২৪ সালে বিপুল মুনাফা করেছে দেশের বৃহত্তম তফসিলি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক পিএলসি। ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা।
২০২৪ সাল শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফার পরিমাণ ৫ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। রেকর্ড মুনাফার পাশাপাশি ২০২৪ সালে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা বেশি।
বৃহস্পতিবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে বিগত বছরের অর্জন সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান এমডি অ্যান্ড সিইও মো. শওকত আলী খান। এ সময় অন্যদের মধ্যে ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টররাসহ, প্রধান কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজাররাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শওকত আলী খান বলেন, বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এ বছর নেট ইন্টারেস্ট ইনকামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকায়, যা গত বছরের চেয়ে ৯৪৯ কোটি টাকা বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হলমার্ক গ্রুপ ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ সম্পত্তি মর্টগেজ দিয়েছিল তার অতিরিক্ত আরো ১৬৭ একর জমি নতুন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ব্যাংকের খেলাপি আদায়ে আমরা জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছি। আইনগত পদ্ধতি চলমান। পাশাপাশি ঋণ খেলাপিরা যদি আমাদের সঙ্গে নেগোশিয়েসন করে সেটেল করতে চায় তবে সে ব্যবস্থাও রয়েছে। ছোট বড় সব ধরনের খেলাপিঋণ আদায়ের কাজ চলছে।
শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির কাছ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১২১ কোটি টাকা আদায় করেছি। বেক্সিমকো গ্রুপের বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত সময়ে বেক্সিমকো প্রতি প্রান্তিকে ঋণ ঠিকমতো পরিশোধ করলেও প্রায় দুটি কিস্তি বাকি রেখে আসছে। যাতে তারা খেলাপি না হয়। গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
তাদের একটি ভালো এবং বড় রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান আছে শাইনপুকুর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমরা কথা বলছি, ভালো প্রতিষ্ঠান চালু রেখে সেখান থেকে সাপোর্ট নেয়া যায় কিনাÑ তা দেখার জন্য।
ব্যাংকের জন্য এ বছরের স্লোগান ‘২০২৫ সাল হবে সোনালী ব্যাংকের সমৃদ্ধির পথে চলার বছর’ উল্লেখ করে তিনি জানান, কর্মীরাই ব্যাংকের প্রাণ। তাদের মোটিভেট করতে আমরা উল্লেখযোগ্য কর্মীদের প্রমোশন দিয়েছি। তারা ভালো থাকলে ব্যাংক আরো ভালো করবে। প্রমোশনপ্রাপ্তদের অনেকেই ৭/৮ বছর পর প্রমোশন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। ব্যাংকের স্বার্থেই আমরা তাদের প্রমোশন দিয়েছি।
খেলাপি ঋণ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এমডি অ্যান্ড সিইও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা খেলাপি ঋণ কমাতে কাজ করছি। তিনি বলেন, হলমার্কের মত চিহ্নিত ঋণ খেলাপিদের থেকে আদায় বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংকটের মধ্যেও ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ১৭৭০ কোটি টাকা। যেখানে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরে আরো কমে আসবে। আর গত বছর কেবল রেমিট্যান্স থেকে আয় ১০২৪ কোটি টাকা। উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সিএমএসএমই ঋণে জোর দিয়েছি। এসএমই ঋণ ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত দেয়া যাবে। আর ক্ষুদ্র খাতে সর্বোচ্চ ২০ কোটি পর্যন্ত দেয়া যাবে। আগামী বছরে এসএমইর উপরে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে।
সোনালী ব্যাংক ইউকে নিয়ে পরিকল্পনা আছে কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক ইউকে দীর্ঘদিন থেকে যে লস করে আসছিল, সেখানে গত বছরে পরিবর্তন করে করা হয়েছে ‘সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড’ এবং ‘সোনালী পে’। এরা গত বছরেও লাভে ছিল, এবারেও লাভ করেছে প্রায় সাড়ে ৬ মিলিয়ন পাউন্ড। বিদায়ী বছরে এখান থেকে ২ মিলিয়ন পাউন্ড ডিভিডেন্ড দিয়েছে, যার ১ মিলিয়ণ পাউন্ড পেয়েছে সোনালী ব্যাংক এবং ১ মিলিয়ন পাউন্ডের একটু বেশি পেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
২০২৪ সালে রেকর্ড মুনাফার কারণে প্রভিশন ঘাটতি কমে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।