পাবনার রমা থেকে সুচিত্রা সেন

নদীমাত্রিক বাংলাদেশ লালন করেছে অনেক শিল্পীকে, যারা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলো ছড়িয়েছেন। শিল্পক্ষেত্রে যোগ করেছেন নতুন ব্যঞ্জনা। তেমনই একজন উজ্জ্বল তারকা সুচিত্রা সেন। এই কিংবদন্তিকে নিয়ে আজকের ‘আনন্দ বিনোদন’-এর এই আয়োজন।

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের বাড়ি বাংলাদেশের পাবনায়। বাড়িটি অযত্নে ও বা অবহেলায় পড়ে আছে এখন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বাড়িটি দখলমুক্ত হয়েছে প্রায় ১০ বছর হল। দেশভাগের সময় তারা সপরিবার কলকাতায় চলে যান। এখন এই বাড়িটি ছাড়া পাবনায় সুচিত্রা সেনের আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার হেমসাগর লেনের এই বাড়িতে জন্ম সুচিত্রা সেনের। নয় ভাইবোনের মধ্যে সুচিত্রা ছিলেন পঞ্চম। বাড়ির ছোটরা ডাকতেন রাঙাদি বলে। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন রমা। শৈশবে পাবনায় মহাকালী পাঠশালায় খাতা কলমে সুচিত্রা সেনের নাম ছিল কৃষ্ণা দাশগুপ্ত।

পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের পাঁচ কক্ষের একতলা পাকা পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিণী।

সুচিত্রা পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা রেখেছেন।

ভারত চলে যাওয়ার পর, সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে রমা দাশগুপ্তের বিয়ে হয়। ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

‘সাত নম্বর কয়েদি’ সিনেমায় অভিনয় করার সময় রমা নামটি বদলে হয়ে যায় ‘সুচিত্রা সেন’।

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ৫৬টি বাংলা ও ৭টি হিন্দি ছিনেমায় অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।

ভারত সরকারও তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। বাঙালির হৃদয়ের মণিকোটায় থাকা এই মহানায়িকা ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে কলকাতার একটি নার্সিং হোমে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।