ট্রেনের যন্ত্রাংশ বিক্রি করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক শাখার কর্মকর্তা (এসএসএই) মো. গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে। বিষয়টি উঠে আসে তদন্ত প্রতিবেদনেও। এর বাইরেও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে ২০টি বিভাগীয় মামলা। এর পরও স্বপদে বহাল তিনি।
রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের আগস্টে ১৫০টি ব্রডগেজ ও মিটারগেজ কোচ আমদানি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ১০০টি মিটারগেজ কোচের সঙ্গে ক্যাপিটাল স্পেয়ার পার্টসও দেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রেলওয়ের সরঞ্জাম শাখা এসব যন্ত্রাংশ রেলের বৈদ্যুতিক শাখাকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি। তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, একাধিকবার চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক-চতুর্থাংশ যন্ত্রাংশ বুঝিয়ে দিলেও স্টোরে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। ইন্দোনেশিয়ার কোচের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০টি টেম্পারেচার সেন্সরও আত্মসাৎ করেন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক শাখার গোলাম মোস্তফা।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলো সরঞ্জাম শাখায় রক্ষিত থাকলেও সেগুলো অবৈধ পন্থায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ ফেরত দিতে একাধিকবার চিঠি ও নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও আমলে নেননি মো. গোলাম মোস্তফা। চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও ক্ষতিপূরণ কিংবা মূল্যবান যন্ত্রাংশ আদায়ের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।
দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ২০টি বিভাগীয় মামলা রয়েছে। এটি উল্লেখ করে গত ১৪ জুলাই সিনিয়র সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সরঞ্জাম শাখা) আসাদুল্লাহ শরীফ একটি চিঠি দেন গোলাম মোস্তফাকে। এর আগে ৬ জুন গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২০টি অভিযোগের প্রমাণসহ সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবিরও একটি চিঠি ইস্যু করেন। সেখানে যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এই যন্ত্রাংশ চুরি নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে। এতে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা ১০০ এমজি কোচের ক্যাপিটাল স্পেয়ার পার্টসের সঙ্গে এসি ইউনিটের দুই ধরনের মোট ৪০টি টেম্পারেচার সেন্সর সরবরাহ করা হয়। ওই ৪০টি মালামালের মধ্যে ১০টি এসএসএই ইনচার্জ (এসি), পাহাড়তলী ডিপো থেকে সরবরাহ নিলেও বাকি ৩০টি মালামাল সরবরাহ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্তে প্রমাণিত হয়, গোলাম মোস্তফা এর জন্য দায়ী। এ বিষয়ে মো. গোলাম মোস্তফাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তদন্ত কমিটিকে বলেন, তিনি এসব সেন্সর সরবরাহ করেছেন। তবে এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। এ কারণে গোলাম মোস্তফাকে চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এ ছাড়া আর্থিক ক্ষতি নির্ধারণপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। তবে আজকের পত্রিকাকে মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলো সঠিক নয়। আমাকে দোষী কেন করেছে, তা আমি জানি না।’
এদিকে ২০২৩ সালের ২৬ আগস্ট কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোর টুল ভ্যানের প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের মালামাল চুরি হয়। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের অধীনে থাকা স্টোরে গত এক বছরে ৪-৫ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ চুরি ও উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় রেলওয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে। তবে মালামাল উদ্ধার হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গোলাম মোস্তফাসহ আরও যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।