পুড়ল আসিফের দুই মন্ত্রণালয়, নীরবে দেখে গেলেন সবকিছু

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে এ ভবনের ৬ থেকে ৯তলা পর্যন্ত ৪টি ফ্লোর। এরমধ্যে আছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার দুটি মন্ত্রণালয়ই। বিষণ্ন মনে পুড়ে যাওয়া ভবন দেখে গেছেন তিনি।

বেলা সাড়ে ১২টায় পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এসময় তার চোখে-মুখে বিষণ্নতার ছাপ দেখা যায়। ভবন পরিদর্শন শেষে বেলা ১২টা ৪৩ মিনিটে নীরবে সচিবালয় ত্যাগ করেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, তারা আগুন লাগার খবর পায় বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে। ২ মিনিটের ব্যবধানে রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। সবশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রায় ১০ ঘণ্টা পর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তা পুরোপুরি নেভে।

আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। তার নাম মো. সোহানুর জামান নয়ন। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ ছাড়া আগুন লাগার কারণও তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এদিকে সরেজমিন দেখা যায়, আগুনে পুড়েছে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের ৬ থেকে ৯তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোর। ভবনের ছয় তলায় রয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সাত তলায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (একাংশ), আট তলায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার (একাংশ), পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় (একাংশ) ছিল। এছাড়া নবম তলায় রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

তার আগে সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আসিফ মাহমুদ বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।

জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝপথেই ঢাকায় ফেরেন আসিফ মাহমুদ।

এখনো জানা যায়নি আগুনের সূত্রপাত

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, রাত ১টা ৫২ মিনিটে আমরা ম্যাসেজ পাই সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লেগেছে। ১টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায়।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। বিশেষ করে বড় গাড়িগুলো ঢোকানো কঠিন ছিল। সচিবালয়ের গেট ভেঙে দুটি বড় গাড়ি ঢোকানো হয়। ৬, ৭, ৮ ও ৯ এই চারটি তলায় আগুন লেগেছে। প্রাথমিকভাবে আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে জানানো হবে।

এদিকে, আগুন লাগার ঘটনায় সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবন বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। লিফটগুলোও বন্ধ। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে প্রবেশ করেও অফিস করতে পারছেন না। কেউ-কেউ সচিবালয়ের বাইরেও অবস্থান করছেন।

আগুনের কারণ খুঁজতে কমিটি গঠন

সচিবালয়ে আগুন লাগার কারণ খুঁজতে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্য-সচিব হবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়)।

সদস্য হিসেবে থাকবেন- জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে নয়), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিনিধি।

কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদঘাটন, অগ্নি দুর্ঘটনার পেছনে কারো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কি না তা উদঘাটন, এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে সুপারিশ করবে।