পুরোনো রাজনীতি আমরা চাই না : নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, পরির্বতনের সাথে যারা তাল মিলাতে পারবে না তারা হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে। আমাদের গণঅভ্যুত্থান এবং আমাদের বর্তমান যে যাত্রা এটি হচ্ছে পুরোনো বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা। পরিবর্তন, সংস্কার, বিচারের মধ্য দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পুরোনো রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থেই একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করতে চাই।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে দলীয় নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের জনগণকে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। এই স্বাধীনতা রক্ষায় ছাত্র-জনতা কাজ করবে। তবে আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। আমাদের ভেতরে যেন কোনো চাঁদাবাজ, অপকর্ম করে এমন কোনো লোক যেন স্থান না পায় সে বিষয়ে সবাই সচেতন হবেন। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের সাথে আমরা কখনো আপস করব না। সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের পরিশুদ্ধ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে কাজ করে আসছেন আপনারা আবার নতুনভাবে সুসংগঠিত হবেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তৈরি হচ্ছে। এগুলোতে আপনারা ভূমিকা পালন করবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার হাত ধরে এসেছে। পরির্বতনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সেই ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায়িত্ব। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছি, জাতীয় নাগরিক পার্টি। আমি বিশ্বাস করি জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি নতুন রাজনৈতিক দল, একটি নতুন রাজনৈতিক সূচনা আমাদের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ক্ষমতার চেয়েও জনতা আমার কাছে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি। সেই গুরুত্বের জায়গা থেকে আমি রাজপথে নেমে এসেছি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি স্পষ্টভাবে বলেছে, আমরা দৃশ্যমান বিচার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতেই আমরা নির্বাচনের দিকে যাব। নির্বাচন করতেই আমরা রাজনৈতিক দল করেছি। শুরুতেই আমরা বলেছি, নির্বাচন হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া একটি নতুন সংবিধান বা সংবিধানের মৌলিক সংস্কার সম্ভব নয়। অনেকে ন্যূনতম সংস্কারের কথা বলছে। আমরা বলি, ন্যূনতম সংস্কার বলে কিছু হয় না। আমাদের মৌলিক ও গুনগত সংস্কার করতে হবে। সেই সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা খুবই স্পষ্টভাবে বলেছি আমাদের গণ অভ্যুত্থান এবং আমাদের বর্তমান যে যাত্রা এটি হচ্ছে পুরোনো বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা। ফ্যাসিবাদীরা পিছু হটলেও পুরোনো বন্দোবস্তের অনেক কিছু আমাদের পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও রয়েছে। তাদের চিন্তা চেতনার মধ্যে রয়েছে। আমরা আহ্বান জানাবো, নতুনত্বকে গ্রহণ করতে জনগণের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আমরা যে নতুন দিনের কামনা করছি, সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। সেই বিষয়ের দিকে যদি আমরা যাই, কারণ যারা পরিবর্তন চায়নি তারা কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। পরির্বতনের সাথে যারা তাল মিলাতে পারবে না তারা হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে। পরিবর্তন, সংস্কার, বিচার এর মধ্য দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পুরোনো রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থেই একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করতে চাই। যারা বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আছেন, এত বছর রাজনীতি করেছেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সাথে ছিলেন তাদের কাছ থেকে জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে মিল রয়েছে সেই উদ্যোগের প্রত্যাশা করি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যক্রম শুরু করেছি। রমজানের পরে আরও দ্রুততার সাথে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের নিজেদের মধ্যে যেন কোনো সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ঢুকতে না পারে এবং সারাদেশে ছাত্র সমন্বয়ক, যারা নতুন রাজনীতি করতে চাইছে পরিকল্পিতভাবে তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। নানা ধরণের মিথ্যা অভিযোগ আসছে। তারা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছে। আমি বলবো বাংলাদেশের জনগণ এই সকল কিছুতে বিভ্রান্ত হবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে এই সরকারকে এনেছে পরিবর্তনের জন্য এবং বিচার পাওয়ার জন্য। সেই কমিটমেন্ট সরকারের রয়েছে এবং আমাদেরও রয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে দাবিটি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি নতুন করে যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে সেই সময়সীমার মধ্যেই সংস্কার, দৃশ্যমান বিচারের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারব। জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই ঐক্যমত আমরা ধরে রাখব। অবশ্যই গণঅভ্যুত্থানের স্প্রিটের সাথে আপস করে আমরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সমঝোতায় যাব না। আমাদের ঐক্যের জায়গাটা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান, শহিদদের আকাঙ্ক্ষা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা।

আন্দোলনে বরিশালের প্রসংশা করে তিনি বলেন, বরিশালের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছিলেন। জুলাই মাসের শুরু থেকেই আন্দোলনে তারা অংশগ্রহণ করেছিলেন। পুরো আন্দোলন জুড়েই বরিশালের ছাত্র-জনতা সাহসী ভূমিকা পালন করেছিল, এটা এক ঐতিহাসিক নজির হিসেবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে থেকে যাবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বরিশালের ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আহত যোদ্ধাদের সুস্থতা কামনা করছি। আমি মনে করি বরিশালে জাতীয় নাগরিক পার্টির সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপিত হবে। বরিশাল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অত্যন্ত সাহস নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছিল, একইভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন নিয়ে বরিশাল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে সেই খবর শুনে পটুয়াখালীর দুমকিতে ছুটে আসেন নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে পটুয়াখালীতে পৌঁছে স্থানীয় প্রশাসন এবং নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন। শহিদ পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। সেখান থেকে ফেরার পথে বরিশালের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।