পেট্রোবাংলায় সাশ্রয় ৬-৮ হাজার কোটি টাকা, শিল্পে গ্যাস বৃদ্ধির আশা

পেট্রোবাংলায় সাশ্রয়

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে কম দামে বিক্রি করায় গ্যাস খাতে লোকসান করছে। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পেট্রোবাংলার সাশ্রয় হতে পারে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে সরকার এই খাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, একই গ্যাসে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে দুই বার শুল্ক-কর আদায় করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

অন্যদিকে, জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি কমবে। বাড়বে এলএনজি আমদানি। একই সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির আশা পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের।

আরও পড়ুনঃ মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা, বাড়বে সংসার খরচ

পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৩ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৯৫ কার্গো আসবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে ১০৫ থেকে ১০৯ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। এতে শিগগির শিল্প খাতে আরও বেশি গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হবে।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, মার্কেট থেকে বর্তমানে গড়ে ১৪ ডলারে এলএনজি কিনছে পেট্রোবাংলা। বর্তমানে ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় ডলার মিলছে। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরে ১০০ থেকে ১০৯ কার্গো আমদানি করা হলে বছরে ৬ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে প্রতিষ্ঠানটির। একই সঙ্গে উৎসে কর কমেছে ৬৬ শতাংশ।

পেট্রোবাংলা বলছে, বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয় পেট্রোবাংলার। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এর বাইরে পেট্রোবাংলাকে এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হচ্ছে। এভাবে বাড়তি রাজস্ব আদায় করে পেট্রোবাংলাকে আবার ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে ভর্তুকির পরিমাণ একেবারেই কমে যাবে। এমনকি এই খাতে সরকারকে বাড়তি ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বকেয়া নিয়ে এর আগেও দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছে বেশ কয়েকবার। বকেয়া অর্থ নিয়ে অনেকটা বিড়ম্বনায় পড়েছিল পেট্রোবাংলা। এর আগে পেট্রোবাংলা একই গ্যাসে দুই বার ভ্যাট না নিয়ে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের আবেদন করে। জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা হয় কয়েক দফায়। অবশেষে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসলো। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পাশাপাশি গ্যাস বিতরণ সংস্থার উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ব্যাপক ঘাটতি, এই ঘাটতি আমরা কমাতে পারবো। এলএনজি আমদানিতে ব্যয় সাশ্রয় করতে পারবো। সরকার যে পরিমাণ ভর্তুকি দেয় সেই ভর্তুকি না দিয়েও আমরা আরও বেশি এলএনজি এনে শিল্প খাতে সরবরাহ করতে পারবো। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের কাছে এই সুবিধাটা চাচ্ছিলাম, এটা হয়েছে, আমরা খুব খুশি।

তিনি বলেন,শিল্প খাতে এখন গ্যাস সংকট নেই। বিশেষ করে গত রোববার থেকে নেই। শিল্পের গ্রাহকরা এখন খুব ভালো অবস্থায় আছেন। আশা করছি এটা আমরা ধরে রাখতে পারবো৷

সরকারের এই যুগ্ম সচিব বলেন, আমাদের এফএসআরইউ মাত্র দুইটা। কারিগরি এবং আবহাওয়াগত বিষয় আছে। যদি সবকিছু অনুকূলে থাকে আমরা আরো বেশি এলএনজি আনতে পারবো ভর্তুকি না বাড়িয়ে। আশা করছি শিল্প খাতের গ্রাহকদের চাহিদা আমরা অনেকাংশে পূরণ করতে পারবো।

ভ্যাট প্রত্যাহার ফলে বছরে কি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে কি পরিমাণে এলএনজি আমরা আনবো, বিশ্ববাজারে দাম কেমন থাকবে। তবে ৬ হাজার কোটি টাকা সর্বনিম্ন এবং আমদানি বাড়ালে ৮ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ