পেরুর জালে ব্রাজিলের হালি গোলের উৎসব

ব্রাজিলের কাছ থেকে মন বা চোখ ভরানো খেলা অনেকটা দিন ধরেই পাননি দলটির ভক্ত-সমর্থকরা। ২০২২ সালের বিশ্বকাপের পর থেকেই উত্থান-পতনের মাঝ দিয়ে সময় পার করেছে সেলেসাওরা। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে নতুন একটা প্রজন্মের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে এরইমাঝে। ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা মাঝে কোপা আমেরিকাতেও হতাশ করেছে। তবে ঘরের মাঠে বুধবার পেরুর বিপক্ষে যেমন খেলা উপহার দিয়েছে ব্রাজিল, তাতে নিশ্চিতভাবেই সন্তুষ্টি খুঁজে পাবেন দলটির সমর্থকরা।

ঘরের মাঠে পেরুর জালে ব্রাজিল পুরেছে ৪ গোল । পেনাল্টি থেকে জোড়া গোল পেয়েছেন রাফিনিয়া। অন্য দুই গোল এসেছে আন্দ্রেয়াস পেরেইরা এবং লুইজ হেনরিকের পা থেকে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বলিভিয়া এবং পেরুকে হারানোর পর এবারই প্রথম টানা দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে ব্রাজিল। মাঝে বেশ কিছু ম্যাচে অপরাজিত থাকলেও পরপর দুই ম্যাচে জয় পাওয়া হয়নি সেলেসাওদের।

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র নেই। শুরুর একাদশে রাখা হয়নি বিষ্ময়বালকের তকমা পাওয়া এন্ড্রিককেও। পেরুর বিপক্ষে ব্রাজিলের শুরুর একাদশে সবচেয়ে বড় ভরসার নাম রাফিনিয়া। বার্সেলোনার হয়ে আছেন দুর্দান্ত ছন্দে। এবার দেশের জার্সিতেও সেই ফর্ম টেনে আনলেন। যদিও গোলটা ব্রাজিল পেয়েছে পেনাল্টি থেকেই।

৩৪ মিনিটের সেই পেনাল্টি সিদ্ধান্ত এসেছে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সুবাদে। আর তারও আগে ম্যাচের ২৪ মিনিটে সেলেসাওদের হতাশ করেছে ক্রসবার। এবারও নেপথ্যে সেই রাফিনিয়া। নাম্বার টেন রোলে খেলা এই তারকার দুর্দান্ত ভলি ফেরত আসে ক্রসবার থেকে। তা না হলে হয়ত গোলের ব্যবধান আরেকটু বাড়ত ব্রাজিলের জন্য। ভাগ্যটা অবশ্য ভালো অন্য দিক থেকেও। ১১ মিনিটে গোল হজম করলেও পেরুর গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে।

গেরসন আর ব্রুনো গিমারেয়েসকে ডাবল পিভট রোলে রেখে দল সাজিয়েছেন কোচ দোরিভাল জুনিয়র। আক্রমণে ছিলেন তরুণ ইগোর হেসুস। ম্যানচেস্টার সিটির সাভিনভো, বার্সার রাফিনিয়া আর রিয়াল মাদ্রিদের রদ্রিগো গোজ ছিলেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ভূমিকায়। ‘আগে ঘর গোছাও পরে আক্রমণ’- দোরিভালের ব্রাজিল প্রথমার্ধ পার করেছে এই নীতির সুবাদে।

যে কারণে ৭৫ শতাংশ বল দখলে রাখলেও পুরো ৪৫ মিনিটে ৫ বারই কেবল প্রতিপক্ষের গোলমুখে শট নিতে পেরেছে। তার মাঝে ১ বার বল ফেরত আসে পোস্ট থেকে। হতাশা কাটতে সেলেসাওদের সময় লেগেছে ১০ মিনিট। ৩৪ মিনিটে ব্রাজিলের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ডি-বক্সে হ্যান্ডবল করে বসেন কার্লোস জামব্রানো। স্পটকিকে গোল করেন রাফিনিয়া। লিড নিয়ে বিরতিতে যায় ব্রাজিল।

তবে ব্রাজিলের ম্যাজিক শুরু হয় দ্বিতীয়ার্ধ থেকে। এই দফায় ব্রাজিল যেন আরও ছন্দময়। ৫৪ মিনিটে ফের পেনাল্টি পেল ব্রাজিল। এবারও জামব্রানোর ফাউলের সুবাদেই পেনাল্টি পেল ব্রাজিল। আবারও সেই রাফিনিয়াই করলেন গোল। ৫৯ মিনিটে গোলের খুব কাছাকাছি গিয়েও হতাশ হতে হয়েছে তাদের।

৭১ আর ৭৪ মিনিটে পরপর দুই গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল। বদলি নামা দুই খেলোয়াড়ের কল্যাণে পেয়ে যায় ম্যাচে নিজেদের তৃতীয় গোল। লুইজ হেনরিকের ডানপ্রান্ত থেকে পাওয়া ক্রসে অসাধারণ এক সাইডভলিতে বল জালে জড়ান আন্দ্রেয়াস পেরেইরা। খানিক পরেই গোল পান হেনরিক নিজেও। পেরুর তিন খেলোয়াড়ের মাঝ থেকে গোল আদায় করে নেন এই মিডফিল্ডার।

এবারের বাছাইপর্বে ব্রাজিলের এটি পঞ্চম ও টানা দ্বিতীয় জয়। ১০ ম্যাচে সমান ১৬ পয়েন্ট নিয়েও গোল পার্থক্যে উরুগুয়ের পেছনে থেকে ব্রাজিল আছে পয়েন্ট তালিকার চারে। সমান ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে আর্জেন্টিনা। ১০ দলের দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্ব থেকে শীর্ষ ছয়টি দল সরাসরি খেলবে ২০২৬ বিশ্বকাপে।