বাণিজ্য, বিমান, বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সিন্ডিকেটনির্ভর বাজার ভেঙে একটি মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ফেরানো সম্ভব হয়েছে। এতে ভোক্তা স্বার্থ যেমন রক্ষা পেয়েছে, তেমনি সামগ্রিকভাবে বাজার ব্যবস্থাপনায় এসেছে জবাবদিহিতা ও ভারসাম্য।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, একসময় দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছিলেন—দেশে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা ছিল। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমরা সিন্ডিকেট ভেঙে প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটপ্লেস তৈরি করেছি, যা অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, ক্ষমতা নেইনি : অর্থ উপদেষ্টা
তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ নয়, বরং নীতি সহায়তা ও নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা বজায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন গতি পেয়েছে, তেমনি মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
প্রস্তাবিত ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, এবার একটি বাস্তবমুখী বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই বাজেটে কোনো বিশেষ শ্রেণিকে কর সুবিধা দিয়ে বৈষম্য তৈরি করা হয়নি। কর কাঠামো সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজেট একটি কাগুজে পরিকল্পনা নয়, এটি একটি রূপরেখা—যার মাধ্যমে সরকারের অগ্রাধিকার, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হয়। আমরা সেই দিকেই অগ্রসর হয়েছি।
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, একসময় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেখান থেকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছি। এখন এসব প্রতিষ্ঠান সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করছে।
অর্থনৈতিক নীতির পরবর্তী ধাপ হিসেবে ঋণ পরিশোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার—বলে জানান শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ধরনের ঋণ দ্রুত পরিশোধে অঙ্গীকারবদ্ধ। এতে দেশের সার্বভৌম আর্থিক সক্ষমতা আরও দৃঢ় হবে।
তিনি মনে করেন, এখন থেকে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ তৈরি হবে, যেখানে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও বাজার সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক ও রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত এই বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার নজির।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।