প্রধান বয়লার পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান দুর্নীতির অভিযোগে শিল্প মন্ত্রনালয়ের দুই তদন্ত কমিটি

#রাজধানীতে ৫টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি

#রাজবাড়ী ও রাজধানীতে কিনিছেন প্রায় শত বিঘা জমি

#বয়লার অনুমোদনে ভাগিনার প্রতিষ্ঠান দিয়ে ঘুষ বাণিজ্য

প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান শতকোটি টাকার মালিক। তিনি শিল্প মন্ত্রাণলয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শক কার্যালয়ের প্রধান বয়লার পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যসহ নানা কারণে সহকর্মীদের কাছে হয়ে উঠেন দুর্নীতির বরপুত্র। নিজের ভাগিনার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নানা অনিয়ম ও কমিশন বাণিজ্য করেছেন। গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গাড়ি ও শত বিঘা জমি। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার বিষয়ে শিল্প মন্ত্রনালয়ের দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের দপ্তরের প্রধান বয়লার পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার বিষয়ে দুটি অভিযোগ বিষয়ে দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। গত ২৪ জুলাই অপসারন সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করতে একটি তদন্ত কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন শিল্প মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব দিলসাদ বেগম ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী সচিব সোহেরা নাসরীন। এই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শিল্প মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অন্য আরেকটি অভিযোগ শিল্প মন্ত্রনালয়ের জিআরএস সফটওয়্যারে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ যাচাই বাছাই করেই ডিজিটাল মাধ্যমে অভিযোগ তালিকাভূক্ত করা হয়। এই সফটওয়্যারের কার্যক্রম প্রধান উপদেষ্ঠার কার্যালয়ের মাধ্যমে তদারকি করা হয়। প্রধান বয়লার পরিদর্শকের অভিযোগটি এখন শিল্প মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ও অভিযোগ নিস্পত্তি কর্মকর্তা (অনিক) ড. মো. সাইফুল ইসলাম তদন্ত শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনিক কর্মকর্তা ও উপ প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মো. ফজলে রাব্বির নিকট অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে মতামত দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. নূরুজ্জামান এনডিসি ভোরের কাগজকে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। তিনি আরো বলেন, তদন্তের ভিত্তিতে অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তা আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রধান বয়লার পরিদর্শক কার্যালয়ের প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে বার বার ফোন দেয়া হয় এবং হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দেয়া হলেও তিনি কোন রেসপন্স করেননি।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সহায়তায় ঘুষের মাধ্যমে আব্দুল মান্নান প্রধান বয়লার পরিদর্শক পদ হাতিয়ে নেন। অভিযোগ রয়েছে তার মামা শ্বশুর ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, চাচা শ্বশুর আওয়ামী লীগপন্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইকবাল আর্সলান এর মাধ্যমে ঘনিষ্ট হন সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর। এই প্রভাবশালী মন্ত্রীকে ম্যানেজ করে ঘুষ দিয়ে এই পদে নিয়োগ পান মান্নান। এরপর তিনি বয়লারের বিভিন্ন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেন। নিজ ভাগ্নের নামে প্রতিষ্ঠান ‘টেকনো কেয়ার’ এর মাধ্যমে বাধ্যতামূলক ডিজাইন করানো হতো। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ঘুষ দিয়ে এসব ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল বয়লারের অনুমোদন মিলতো। তবে টেকনো কেয়ারের বাইরের কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজাইন করালে সেটির অনুমোদন মিলতো না।
সুত্র বলছে, মান্নান কার্যালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বয়লার নির্মাণ, বয়লার নিবন্ধন, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও বয়লার অপারেটর সদন প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ডিজাইন ও এর অনুমোদোন বাবদ ৮ স্তরের প্রতি স্তরে ১৫-২৫ হাজার টাকা করে ঘুস দিতে হতো। এই টাকা সরাসরি প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌঃ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের কাছে দিতে হতো। শর্ত না মেনে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. শরাফত আলী যথাযথ জেলা কোটা অনুসরণ না করে, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের বিনিময়ে বয়লার টেকনিশিয়ান পদসহ নানান পদে বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করেছেন।
শিল্প মন্ত্রনালয়ে দায়েরকৃত অভিযোগের সূত্রে বলা হয়েছে, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের মিরপুর ডিওএইচএস এর ৬ নাম্বার রোডের ৪১৬ নাম্বার গ্রীণ উড সাউথ শাইন বিল্ডিং ২২৫০ বর্গফুটের দুইটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার মূল্য ৭ কোটি টাকা। রাজবাড়ী শহরে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি ডাবল ইউনিটের বহুতল আলিসান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। রাজবাড়ী সদর হাসাপাতালের কাছে ৫ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২০ কাঠা জমি, ঢাকার হেমায়েতপুরে সুগন্ধা হাউজিং এ ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৮ কাঠার একটি প্লট কিনেছেন। এছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট এবং প্লট রয়েছে।