ইউরোপজুড়ে চলমান ভয়াবহ তাপদাহের মধ্যে ফ্রান্সে মঙ্গলবার (১ জুলাই) তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমন পূর্বাভাসের ভিত্তিতে দেশজুড়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। প্যারিসসহ ১৬টি অঞ্চলে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্যারিসে আইফেল টাওয়ারের চূড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, বাতাসে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় সড়কে দূষণকারী যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কিছু এলাকায় গতিসীমা কমিয়ে আনা হয়েছে।
ইউরোপের প্রায় পুরো দক্ষিণ অঞ্চল—আইবেরীয় উপদ্বীপ থেকে শুরু করে ফ্রান্স, ইতালি, বালকান রাষ্ট্রগুলো এবং গ্রিস-পশ্চিমা এই তীব্র তাপদাহে জ্বলছে। এতে অনেক দেশে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং দাবানলের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খবর ফ্রান্স ২৪ নিউজের।
ফরাসি আবহাওয়া সংস্থা মেতিও ফ্রান্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশটির ১৬টি ডিপার্টমেন্টে জারি হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাপ সতর্কতা। আরও ৬৮টি এলাকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৪ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে, এবং কিছু এলাকায় ৪১ ডিগ্রিতেও পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইফেল টাওয়ার পরিচালনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার (৩০ জুলাই) দুপুর থেকে টাওয়ারের শীর্ষভাগ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে এবং এটি মঙ্গলবার ও বুধবার বন্ধ থাকবে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় তলার প্রবেশ এখনও খোলা থাকলেও, পর্যটকদেরকে রোদ থেকে বাঁচার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্যারিস ও আশপাশের ইল-দ্য-ফ্রান্স অঞ্চলে সকালে ৯টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত দূষণকারী যানবাহনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে কিছু এলাকায় গতি সীমা ২০ কিলোমিটার/ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
তীব্র গরমের কারণে মঙ্গলবার প্রায় এক হাজার ৩৫০টি স্কুল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে, যা সোমবারের তুলনায় দ্বিগুণ। শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, শ্রেণিকক্ষ অতিরিক্ত গরম ও বাতাসবিহীন হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে শিশু, প্রবীণ এবং যারা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন তাদের জন্য। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর জলবায়ু গবেষক আকাশয় দেওরাস বলেন, ‘তাপপ্রবাহ প্রাণঘাতী হতে পারে। এটি মোকাবিলায় আমাদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো গুরুত্ব সহকারে প্রস্তুতি নেয়া উচিত।’
এদিকে পর্তুগালে গত দুই দিন রেড অ্যালার্ট থাকার পর মঙ্গলবার কিছুটা স্বস্তি মিললেও অন্তত ৮টি এলাকায় এখনো অরেঞ্জ অ্যালার্ট রয়েছে। কাস্তেলো ব্রাঙ্কো, বেজা ও এভোরায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। রাজধানী লিসবনে এটি থাকবে ৩৪ ডিগ্রি।
সোমবার পর্তুগালের কিছু অঞ্চলে দেখা গেছে বিরল এক আবহাওয়া দৃশ্য—সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে বিশাল এক অনুভূমিক মেঘ (রোল ক্লাউড) ছুটে এসেছে প্রবল বাতাসের সঙ্গে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন,
‘আকাশ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল। সবাই দৌঁড়ে নিজের জিনিস গুটিয়ে নিল—এটা যেন সুনামির মতো মনে হচ্ছিল।’
স্পেনেও দক্ষিণাঞ্চলে জুন মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে রোম, মিলান, পেরুজিয়া, পালের্মোসহ ইতালির ১৮টি শহরে জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। ক্রোয়েশিয়া ও মন্টেনিগ্রোর অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলেও জারি করা হয়েছে একই সতর্কতা।