বন্যাকে অজুহাত দেখিয়ে পকেট কাটার উৎসব বন্ধের আহবান-ক্যাব’র

উজান থেকে আসা পানিতে ফেনী, নেয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের প্রায় ১১টি জেলায় বন্যায় ৪৫লক্ষের অধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। পানিবন্দী এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার এবং আশ্রয়ের অভাবে মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় মানুষ অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার, হাসপাতাল বন্ধ, রেল, মহাসড়কসহ সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুত, গ্যাস, মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ঠ জলাবদ্ধতায় পুরো নগরী তলিয়ে গেছে। পাহাড়ধ্বসে বেশ কিছু প্রাণহানিও ঘটেছে। এ অবস্থায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত নৌকার ভাড়া, গণপরিবহন ও ট্রাক ভাড়া, মোমবাতি, শুকনো খাবার, খাবার পানি, সবজিসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বানবাসী মানুষদের কষ্টকে পুঁজি করে ব্যবসা করার পরিবর্তে নিত্যখাদ্য পণ্য ও সেবায় জনগনের পকেট কাটার উৎসব বন্ধ ও লোক দেখানো সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় ত্রাণ বিতরণের চেয়ে মানুষের পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি।

শনিবার ২৪ আগষ্ট ২০২৪ইং চট্টগ্রাম-ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলে সৃষ্ঠ বন্যার কারণে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগ সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ ও ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ উপরোক্ত দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতৃব্ন্দৃ বলেন, ব্যবসায়ীরা সমাজের এমন একটি বিচিত্র প্রাণী যারা বিগত ১৫ বছর সরকারের ছত্রছায়ায় শুধু মুনাফা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তার অবকাশ পায়নি। যার কারণে বিগত সরকারের প্রতি অতিকৃতজ্ঞ সুবিধাভোগী চক্রটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমনে আওয়ামীলীগ সরকারকে আজীবন সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন। একশ্রেণীর অসাধু গুটিকয়েক ব্যবসায়ী মানুষের যে কোন সংকটকে পুঁজি করে জনগনের পকেট কেটে কোটিপতি হবার বাসনায় উন্মাদ বনে যান। তখন মানবতা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেকারণে “দুর্যোগ মহামারী কারো জন্য পৌষ মাস, আবার কারো জন্য সর্বনাশ”। এই ব্যবসায়ী চক্রটি দেশে করোনা মহামারী চলাকালীণ সময়ে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দুষ্প্রাপ্যতা ও অগ্নিমূল্য, ক্লিনিকে চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ অক্সিজেন সিলিন্ডারের অগ্নিমূল্য আদায়ের বিষয়টি জাতি এখনও ভূলতে পারে নি। এখন পানি বন্দি মানুষকে শুকনা খাবার, নিত্য খাদ্যপণ্য, সবজি, নৌকা-বাস, ট্রাক এমনকি বিমান ভাড়ায়ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে অর্থ লিপ্সু ও মূল্য সন্ত্রাসীতে পরিনত হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ব্যবসায় মুনাফা হবে, কিন্তু সংকট হলেই বিমানের টিকেটের মতো দ্বিগুন দাম বৃদ্ধি এটা কি ব্যবসা? নাকি সিন্ডিকেট এটা ফায়সালা জরুরি। যে কোন পুজা, পার্বন, ঈদ উৎসবে আমাদের ব্যবসায়ীরা যেভাবে অতিমুনাফায় একযোগে সোচ্চার হন তা কতটুকু নৈতিক ও যুক্তিসঙ্গত? সরবরাহ কম, আর্ন্তজাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে পণ্যমূল্যের দাম বাড়ালেও সরবরাহ বাড়লে বা আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমার পরে “আবার উল্টো সুর বেশী দামে কেনা” এ সমস্ত বিষয়গুলো কোন ধরনের নৈতিকতা? তাই সাধারণ ভোক্তাদেরকে সংকটকালীন সময়ে জিম্মি করে অতিমুনাফা করে সংকটাপন্ন ও বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে মানবিকতা দেখানোর পরিবর্তে ব্যবসায়িক নীতি ও নৈতিকতা মেনে ব্যবসা করার জন্য দেশের ব্যবসায়ী সমাজ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, করপোরেট হাউসসহ দেশের বিত্তবানদের বন্যার্তদের সাহায্যে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।