বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের শ্রীলংকায় ঔষধ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান

ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলংকা আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক বিজনেস প্লেনারি সেশনে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ।

বুধবার (১৮ জুন,২০২৫) তারিখে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলংকা আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক বিজনেস প্লেনারি সেশনে শ্রীলংকা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। শ্রীলংকায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুনঃ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে এফটিএ স্বাক্ষরের আহ্বান ঢাকা চেম্বার সভাপতির

ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলংকার সভাপতি আনূরা ওয়ারনাকুলাসুরিয়া বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারষ্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস জরুরী এবং দুদেশের বেসরাকরিখাতের মধ্যকার এ ধরনের সমন্বয় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে ।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল এবং বাংলাদেশের তৈরি পোষাক, ঔষধ, চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও হালকা প্রকৌশল এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাত এ অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি জানান, শ্রীলংকার উদ্যোক্তাবৃন্দ ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, টেক্সটাইল ও তৈরি পোষাক, জ্বালানী, অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে ৪৩৮.১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়নে প্রায় ৩দশক পূর্বে স্বাক্ষরিত ‘ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট’ যুগোপযোগীকরণের উপর জোরারোপ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।

শ্রীলংকা-বাংলাদেশ বিজনেস কো-অপারেশন কাউন্সিলের সভাপতি আন্দ্রে ফার্নান্দো তাঁর দেশের ঔষধ শিল্পের উন্নয়ন ও বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

শ্রীলংকা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান মানগালা ওয়াইজেসিঙ্গহি জানান, শ্রীলংকার জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান ১৯.৬% এবং ২০২৪ সালে মোট রপ্তানি ছিল ১৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, শ্রীলংকা তার রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর অধিক হারে প্রধান্য দিচ্ছে। তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ হতে ঔষধ, তৈরি পোষাক, ফেব্রিক্স এবং কেমিক্যাল প্রভৃতি পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়াও সূতা ও টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স, মসলা, পশু খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বাদাম ও কৃষি পণ্য প্রভৃতি খাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। শ্রীলংকার ঔষধ, প্যাকেজিং, লজিস্টিক ও রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট অফ শ্রীলংকা রেনুকা এম ওয়াইরাকুনে বলেন, দুদেশের মধ্যকার এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেকাংশে বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাও নিরসন হবে। তিনি বলেন, শ্রীলংকায় ঔষধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং ফেব্রিক্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে। সেই সাথে অবকাঠামো, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি এবং শিক্ষা প্রভৃতি খাত শ্রীলংকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শ্রীলংকার বিনিয়োগ বোর্ড উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সকল সেবা সম্বলিত ১৫টি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল পরিচালনা করছে, যেখানে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারে।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে শ্রীলংকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকা হাইকমিশনার ধর্মপালা বীরাক্কোদি বক্তব্য প্রদান করেন। হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অতিদ্রুত এফটিএ স্বাক্ষর জরুরী।

ডিসিসিআই প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে এফটিএ স্বাক্ষরে দুদেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও উভয় দেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে, তিনি মত প্রকাশ করেন। উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুদেশের শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা নিরসনের পাশাপাশি নীতির যুগোপযোগী সংষ্কারের উপর তিনি জোরারোপ করেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে, ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সাথে ৭০টি শ্রীলংকান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির মধ্যকার ১৫০টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান এবং প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ