বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন: সরকারের নীতিসহায়তা চান হিমাগার মালিকরা

আলু সংরক্ষণ ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে আনার মাধ্যমে আলু চাষকারী কৃষকদেরকে সুরক্ষা প্রদানসহ বাজারে আলুর দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে সরকারের নীতিসহায়তা চেয়েছেন হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশন।

তারা প্রচলিত দন্ডসুদসহ ব্যাংক ঋণের সুদ শতকরা ১৭ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ৭ ভাগ করার এবং বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি রেট পিক আওয়ারে ১৩.৬২ টাকা ও অফপিক আওয়ারে ৯.৬২ টাকার স্থলে ৫ টাকা করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ভ্যাট ও উৎসে কর কর্তন (টিডিএস) প্রত্যাহার চান তারা।

শনিবার সকালে বাংলাদেশ কোল্ড ষ্টোরেজ এসোসিয়েশনের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহŸান জানান সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, বিগত ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সনে আলুর বাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ মূল্যহ্রাস ঘটে। ফলে হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বের না করায় হিমাগার মালিকগন ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন। ফলশ্রæতিতে ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের কিস্তি নিয়মমাফিক পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন আর্থিক চাপ ও সমস্যা নিয়ে হিমাগার পরিচালনা করছেন যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ৩ মাস পর পর ব্যাংক ঋণের কিস্তি প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছে। কিন্তু হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় মার্চ মাসে এবং খালাস হওয়া শুরু হয় জুলাই মাসে। যার ফলে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণের কিস্তি প্রদান করতে না পারায় ঋণখেলাপীতে পরিণত হচ্ছে। ফলে ১৫ শতাংশ ব্যাংক সুদের সঙ্গে আরও ২ শতাংশ সুদ যোগ হয়ে তা ১৭ শতাংশে দাড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় ব্যাংক ঋণের সুদ এবং বিদ্যুৎ বিলের খরচ কমিয়ে আনা এবং ব্যাংক ঋণের কিস্তি ত্রৈমাসিক এর পরিবর্তে বাৎসরিক ভিত্তিতে পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানান।

তিনি জানান, ২০২৪ সালে এসোসিয়েশন নির্ধারিত হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ছিল কেজি প্রতি ৭/- টাকা। সে হিসাবে ৫০ কেজির বস্তার আলু ভাড়া ৩৫০/- টাকা। আলু সংরক্ষণকারীগণ ৭০ থেকে ৭২ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া ৩৫০/- টাকা প্রদান করেই হিমাগার থেকে আলু বের করেছেন। ফলে হিমাগার মালিকগণ প্রতি বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলুর ভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা প্রায় ২০-২৫% কমে গিয়েছে এবং গড়ে ১০,০০০ মে. টনের একটি হিমাগার প্রায় ১.৫ কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফলশ্রæতিতে দেশের চারশত হিমাগারের মধ্যে প্রায় তিনশত হিমাগার সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে রূগ্ন হিমাগারে পরিণত হয়েছে এবং বেশ কিছু হিমাগার ঋনখেলাপীতে পরিণত হয়েছে।
এসময় তিনি জাানান, ২০২৫ সালে হিমাগারসমূহে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপরে বর্নিত খরচগুলি বিবেচনায় নিয়ে কেজি প্রতি ভাড়া ৮/- টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণে যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারিত কেজি প্রতি ৮/- টাকা ভাড়ায় হিমাগার পরিচালনায় সহায়তা করার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি হিমাগার শিল্পকে রক্ষার্থে সকলের প্রতি আহŸান জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

এবছর আলুর যথেষ্ট উৎপাদন হয়েছে উল্লেখ করে আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে কোনোভাবেই গত বছরের ন্যায় হবেনা বলে আশ্বাস দেন সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইশতিয়াক আহমেদ, পরিচালক হাসেন আলী, কাজী মেহাম্মদ ইদ্রিস, চন্দন কুমার সাহা, মো. তারিকুল ইসলাম খান, গোলাম সরোয়ার রবিন, মাইনুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম বাবু, ফরহাদ হোসেন আকন্দ, মো. কামরুল ইসলাম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুসান্ত কুমার প্রামনিক।