বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের তালিকা

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা

বলা হয়ে থাকে ব্যাংকিং খাতের যত বড় বড় অনিয়ম, দুর্নীতি রয়েছে এদের সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকর্তা বেপরোয়া হয়ে দেশের সম্পদ লুটেরাদের সহযোগীতা করছে। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের ভিত্তিতে এসব অপকর্মের তদন্ত রিপোর্ট হলেও সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম কোনভাবেই প্রকাশ হতো না। তবে এবারে অনৈতিক কাজে জড়িত এসব কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করে শাস্তির আবেদন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সার্চ কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে দেশের সম্পদ লুটেরাদের প্রধান সহযোগী ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সব অপকর্মের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তিনি। এছাড়া নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক রিজার্ভ চুরির তালিকাভুক্ত আসামি। একই সঙ্গে তিনি দুর্নীতির অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের বাণিজ্যিক দালাল ও টাকা পাচারকারী মেজবাউল হক। এতে আরো বলা হয়, বিকাশের মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের পরিকল্পনা ও ব্যাংকের নীতি পলিসির তোয়াক্কা না করে মানিলন্ডারিং এ উৎসাহ দিয়েছেন মেজবাউল হক। রিজার্ভ চুরির পরে তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান কোনো রাষ্ট্রের উর্ধতন ব্যক্তির পরামর্শে বিজার্ড চুরির এ সংবাদ এক মাসের মত গোপন রাখেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের পরামর্শে ও মাধামে চুরি সংশ্লিষ্ট আইসিটি আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সেই রাকেশ আস্তানাকেই আইসিটি সিকিউরিটি এক্সপার্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এক মাস ধরে সকল আলামত নষ্ট করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক সহ ব্যাংকিং খাতের আইসিটি ব্যবসার জন্য আইসিটি প্রতি মন্ত্রী পলক, তাঁর ঘনিষ্ঠজন দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু ফাংশনালিটি বিশেষ করে পেমেন্ট সিস্টেমস ও সিআইবি বাণিজ্যিকি করণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্যের সাথে সরাসরি সংঘর্ষপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আব্দুর রউফ তালুকদার এসমস্ত কাজ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুইস স্থাপনের জন্য জয়, দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের যোগসাজশে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকৃত খরচের চেয়ে ২০ গুণ অর্থ বায় করে বিনিময় প্রকল্প শুরু করা হয়। এই প্রকল্প পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্ধেক লভ্যাংশ শেয়ারের জন্য একটি চুক্তি করা হয়।

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা


ভারতের টাইম ইন্ডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ‘টাকা পে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড’ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও সাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ মালিকানায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারতের যে কোনো এআইএম থেকে টাকা উত্তোলনের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ডেটা সেন্টারের সাথে সরাসরি সংযোগের কাজ চলমান আছে। জয়ের ব্যবসায়ীক ক্ষত্র বৃদ্ধির জন্য দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমের সব ফাংশন বেসরকারি করনের জন্যে এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি আভ্যন্তরীনভাবে প্রায় শেষ করে রেখেছেন। তবে এ বিষয়ে দাপ্তরিক কোনো সার্কুলার হয়নি।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয় নির্বাহী পরিচালক (আইসিটি) দেবদুলাল রায় ও আটক হওয়া প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক একই স্কুলের ছাত্র হওয়ায় পলক দেবদুলালকে ও মেজবাউল হককে জয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংকিং খাতের আইসিটিকে নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ক্রয় কাজে সিন্ডিকেট ফরম করেন। এছাড়াও এই তিনজন মিলে পেমেন্ট সিস্টেমস এবং আইসিটি বিভাগের সব ক্রয় সংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন আইসিটি পণ্যের উৎপাদক, ডিস্ট্রিবিউটর ও সরবারহকারি মিলে এক অবিচ্ছেদ্য সিন্ডিকেট করে ১ টাকার পণ্য ১০০ টাকায় ক্রয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাধ্য করায়। দেবদুলাল রায় ও মেজবাউল হকের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটা সেন্টার বেসরকারি খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল আইসিটি সিষ্টেমস কেনাকাটা দেবদুলালের হাতে কুক্ষিগত হয়ে আছে। প্রকিউরমেন্ট সেকশনটি তার সহযোগী জনবল দিয়ে সাজিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সেকশনের উপর থেকে নিচের সকল কর্মকর্তার তালিকায় আছে ওঈও বিভাগের ২ জন পরিচালক (৩য় গ্রেড)। তারা হলেন- চন্দন সাহা ও পঙ্কজ কুমার মল্লিক। অতিরিক্ত পরিচালকদের (৪র্থ গ্রেড) মধ্যে বিষ্ণু পদ বিশ্বাস, যুগ্ম পরিচালক (৫ম গ্রেড) প্রকাশ চন্দ্র মন্ডল, উপপরিচালক (৬ষ্ঠ গ্রেড) মিথুন সরকারের সমন্বয়ে সাজিয়ে নিয়ে সকল অপকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে চলমান সিবিএস ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটা কনসাল্টিং সার্ভিসেস (আইসিএস) থেকে ক্রয় করা। মেজবাউল হক এবং দেবদুলাল রায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এ কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম এস আলমের এজেন্ট, প্রচুর অবৈধ টাকার মালিক ও ব্যাংকের স্বার্থ বিরোধী কাজে পটু। এমন পরিস্থিতিতে এ কর্মকর্তার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে চিঠিতে। এছাড়া দেবদুলাল, আনোয়ারুল ইসলাম ও মেজবাউল হককে ডেপুটি গভর্নর পদে পদোন্নতি না দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার অনুরোধও করা হয়।

চিঠিতে আরো দাবি –

১. রিজার্ভ চুরির অধিকতর ইনেভেস্টিগেশন করে যারা আওয়ামী সরকারের সহায়তায় এই তালিকা থেকে অব্যাহিত নিয়েছে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।

২. বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাংশনালিটি কে বানিজ্যিকি করনের কুশীলবদের শান্তি ও চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া।

৩. তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে যাদের সহায়তায় মানি লন্ডারিং, ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ লুণ্ঠন, আইসিটি খাতে অযাচিতভাবে পণ্য ক্রয়কে জাতীয় সম্পদের অপচয় করেছে তাদের চাকুরীচ্যুত ও শাস্তি নিশ্চিত করা।

৪. দ্রুত তদন্ত করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন আইিসিট পণ্য ক্রয় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের নিরাপত্তায় ঝুঁকি সৃষ্টিকারী ও পণ্ড ক্রয়ের নামে অর্থ পাচারে সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে চাকুরীচ্যুত ও শাস্তি দেয়া।

৫. গত ১২ বছর ধরে কেন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিবিএস তৈরি না করে ভারতীয় সফটওয়ার আইসিএস-সিবিএস চালিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমকে পরোক্ষভাবে ভারতের উপর নির্ভরশীল রাখার বিষয়টি তদন্ত করা ও শাস্তির ব্যবস্থা করা।

৬. জয়কে বাণিজ্যিক সুবিধা দেবার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমকে অর্থাৎ পেমেন্ট সিস্টেমসকে বাণিজ্যিকীকরণের উদ্দেশ্যে বেসরকারি করণের উদ্যোগ গ্রহণ কেন করা হল তার জন্য দেবদুলাল, মেজবাউল হক এবং এ সংশ্লিষ্ট সহযোগী অন্যান্য কর্মকর্তাকে কৈফিয়ত তলব করে তদন্ত করা যেতে পারে ও শাস্তির আওতায় আনা।

৭. দেবদুলাল, আনোয়ারুল ইসলাম ও মেজবাউল হকের শত শত কোটি টাকা লুটের বিষয় তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করা।

মরিয়ম মনি

#