বাজেটে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ার রোডম্যাপ অনুপস্থিত: সেলিম রায়হান

বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান

বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য কিছু পরিকল্পনা থাকলেও নীতি পর্যায়ে কার্যকর প্রতিশ্রুতি বা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ার রোডম্যাপ অনুপস্থিত। কর সংস্কার, অর্থনীতির আনুষ্ঠানিকীকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইনগত নিশ্চয়তা—এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে সুস্পষ্ট কৌশলের অভাব রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা দুর্বল করতে পারে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা মূল চ্যালেঞ্জগুলো—যেমন মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, স্থবির বিনিয়োগ প্রবাহ ও বৈষম্য চিহ্নিত করেছেন। এসব সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তবে এই কৌশলগত ভাষার আড়ালে গভীর কাঠামোগত দুর্বলতা স্পষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট মূলত আগের বছরের কাঠামো অনুসরণ করেছে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলোর প্রতি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের অভাব রয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের অসঙ্গতি—দুর্বল রাজস্ব আহরণ, অদক্ষ সরকারি ব্যয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা গভীরভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।’

আরও পড়ুনঃ বাজেটে বৈষম্যের চিত্র দেখা যাচ্ছে: সিপিডি

সানেম নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় যে বৈষম্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দাবি উঠেছিল, তার আংশিক প্রতিফলন বাজেটে থাকলেও উদ্যোগগুলো খণ্ডিত ও সীমিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং বরাদ্দও অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে। এছাড়াও এ খাতে কার্যকর ব্যয়ের নিশ্চয়তা দিতে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাও অনুপস্থিত। ফলে বাস্তব পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।’

‘এই বাজেটের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় অর্থবহ সংস্কারের অনুপস্থিতি। বাজেট বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমন্বয়ের উন্নয়ন এবং ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে বাজেট আবারও সংখ্যাভিত্তিক একটি কাগুজে অনুশীলনে পরিণত হয়েছে। যার মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা অপ্রতুল।’

প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কি দেশের গভীর অর্থনৈতিক সংকটগুলোর মোকাবিলা করবে, না কি রাজনৈতিক অস্থিরতাই তার মূল ফোকাস হয়ে থাকবে? নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা ও চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় সরকার ইতোমধ্যেই চাপে পড়বে। বেকারত্ব, বিনিয়োগ, মুদ্রাস্ফীতি ও বৈষম্যের মতো অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি ও আন্তরিক পদক্ষেপ না নিলে জনআস্থা আরও কমে যাবে।’

রাজনৈতিক সংকট ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংস্কারেও এখন সমান গুরুত্ব দেওয়া সময়ের দাবি। সরকার যদি এই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাজেট হয়ে থাকবে শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা বলে মনে করেন তিনি।

তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট অর্থ উপদেষ্টার আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন, বিশেষ করে বাজেট বক্তব্যের বাস্তবতানির্ভর সুরে তা স্পষ্ট। এতে দেশের বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে তার সচেতনতা এবং বাজেটকে একটি অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের আগ্রহ ফুটে উঠেছে।’

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ