বাড়তি শুল্কের চাপে চশমা শিল্প

অত্যন্ত জরুরি একটি পণ্যের নাম চশমা। চোখের সমস্যার সমাধানে ওষুধ হিসেবে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। এটাকে চিকিৎসার একটি অন্যতম জরুরি ওষুধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আবার রোদের হাত থেকে চোখ নিরাপদ রাখতে ও ফ্যাশন অনুষঙ্গের অন্যতম উপকরণ হচ্ছে সানগ্লাস। প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দেশীয় চাহিদার প্রায় পুরোটাই আসে বাইরে থেকে। অথচ শখের সানগ্লাস বা প্রয়োজনীয় চশমা ব্যবহারে এখন থেকে সম্পূরক শুল্ক বেড়েছে তিনগুণ। শুধু তাই নয়, বাড়তি রাজস্ব আয়ের খড়গে শতাধিক সেবা ও পণ্য। যার চাপ পড়ছে সরাসরি ভোক্তার ওপর। চড়া মূল্যস্ফীতির এই সময়ে এনবিআরের এমন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি সাধারণ মানুষের।

সাধারণত দেশের বাজারে দুই ধরনের চশমা বিক্রি হয় রোদচশমা (সানগ্লাস) ও পাওয়ার লেন্স (চক্ষুচিকিৎসকের নির্দেশিত চশমা)। এ ছাড়া দেশে কন্ট্যাক্ট লেন্সের ব্যবহারও বাড়ছে। তবে বিক্রি হওয়া চশমার ৬০-৭০ ভাগই পাওয়ার লেন্স।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও আমদানিনির্ভর রয়ে গেছে চশমার বাজার। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর দেশে উৎপাদিত চশমা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার। অর্থাৎ চশমার আনুষ্ঠানিক বাজার প্রায় ১৭০ কোটি টাকার। আমদানিকৃত চশমার ৯০ শতাংশই মিথ্যা ঘোষণায় ও অবৈধ পথে আসে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা চশমার বাজার পৌনে সাত শ কোটি টাকার মতো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চশমা ও লেন্সের ওপর আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। এ জন্য ৯০ শতাংশ চশমাই আসে অবৈধ উপায়ে, অর্থাৎ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে। এতে বিপুল পরিমাণে শুল্ক হারাচ্ছে দেশ। এখন নতুন করে আবার তিনগুণ শুল্ক বাড়ানোর কারণে চশমার বাজারে আরো রেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাজধানীর কমলাপুরে চশমা ও সানগ্লাসের ব্যবসা করেন মো. ইয়াছিন উদ্দিন। বছর খানেক আগেও তার দোকানে বিক্রেতাদের আনাগোনা ছিল বেশ। নানা কারণে এখন বিক্রিতে পড়েছে ভাটা। নতুন করে তিনগুন শুল্ক হার বাড়ায় পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
চলতি অর্থবছরের বাকি ছয়মাসে বাড়তি ১২ হাজার টাকা আদায়ে মরিয়া এনবিআর। তাই সংস্থার চোখ পড়ে চশমাতেও। উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম ও রিডিং গ্লাস বিক্রিতে পনেরো শতাংশ নির্ধারণ কর নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিলো পাঁচ শতাংশ। আর সানগ্লাসের ক্ষেত্রে যা করা হয় দ্বিগুণ। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও ব্যাংক ঋণসহ অর্থনৈতিক নানা সংকটের প্রভাব চশমা শিল্পেও। আমদানি পর্যায়ে ব্যয় বাড়লেও সমন্বয় করা হয়নি বিক্রির দামে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে লাগাম টানতে হবে প্রয়োজন বা শখের চশমা ব্যবহারে। চড়া মূল্যস্ফীতির এই সময়ে এনবিআরের এমন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি ব্যবসায়ীদের।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, আগে প্লাস্টিকের চশমায় ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। এখন সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। একইভাবে মেটালের ফ্রেমের চশমায় ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। রিডিং গ্লাসের প্লাস্টিক ও মেটালÑ উভয় ধরনের ফ্রেমেও ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে এনবিআর। পাশাপাশি সান গ্লাসের প্লাস্টিক ও মেটালÑ উভয় ধরনের ফ্রেমেও ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
আগে দোকান থেকে এক হাজার টাকার একটি চশমার ফ্রেম কিনলে ৫০ টাকা ভ্যাট দিতে হতো। এখন যেহেতু ভ্যাটের হার তিনগুণ হয়েছে তাই দিতে হবে ১৫০ টাকা। তার মানে খরচ বাড়বে ১০০ টাকা।