সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাতিষ্ঠানিক খাত সংস্কার প্রাধান্য দিয়ে আগামী ২ জুন সংকোচনমূলক বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। তবে এবারও থাকছে কালো টাকা সাদা করার সু্যোগ। প্রস্তাব করা হবে আয়করের হার বাড়ানোর। এছাড়া দ্বিগুণ হতে পারে কমিউনিটি সেন্টারের উৎসে কর। এতে বাড়বে বিয়ে আয়োজনের খরচ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ক্ষমতায় আসে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
আগামী অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্য, ফ্রিজ, এসি, সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টারের সেবার জন্য উৎসে কর দ্বিগুণ করা হতে পারে। এর ফলে বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের খরচ আরও বাড়বে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তি, বিনিয়োগে স্থবিরতা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাসহ অর্থনৈতিক নানান সংকট উত্তরাধিকার সূত্রে পায় বর্তমান সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার মাত্র ২ মাস পর পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। তবে নতুন সরকার এসে পুরাতন বাজেটই অনুসরণ করে। আগামী অর্থবছরের বাজেটেও থাকছে না বড় কোনো চমক।
আরও পড়নঃ বাজেট উপস্থাপন ২ জুন, প্রচার হবে বিটিভিসহ সব ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথা ভেঙে এবার বাজেটের আকার কমানো হচ্ছে। কৃষিপণ্যে উৎসে কর কমানো হতে পারে। এতে চাল, ডালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম কমতে পারে। অনেক মধ্যবিত্ত নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সরকারি ট্রেজারি বিল কেনেন, সেখানেও দ্বিগুণ হচ্ছে উৎসে কর।
আগামী অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্য, ফ্রিজ, এসি, সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টারের সেবার জন্য উৎসে কর দ্বিগুণ করা হতে পারে। এর ফলে বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের খরচ আরও বাড়বে।
বর্তমানে একজন ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা হলে তাকে কর দিতে হয় ৮ হাজার টাকা। আসছে বাজেটে এই করের পরিমাণ আরও ২৫০০ টাকা বাড়বে। বর্তমানে আয়কর ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ বাড়িয়ে এবার তা ৩০ শতাংশ করা হতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, মানুষের জীবনমান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় বাড়তি নজর দিয়ে আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটের এই আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট তুলে ধরবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
আগামী বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তী স্ল্যাব এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ পরবর্তী স্ল্যাব হবে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে বাড়ছে সর্বনিম্ন করহার, ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।
ভ্যাট বাড়লে প্লাস্টিক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিক্রি কমে যাবে, উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্লাস্টিকের পণ্য সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, ফেরিওয়ালারা এসব পণ্য বিক্রি করেন।
নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতার করমুক্ত সীমা হতে পারে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতার করমুক্ত সীমা হতে পারে ৫ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা করদাতাদের জন্য এই সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা-মাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রতি পোষ্যের জন্য করমুক্ত সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে।
বর্তমানে একজন ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা হলে তাকে কর দিতে হয় ৮ হাজার টাকা। আসছে বাজেটে এই করের পরিমাণ আরও ২৫০০ টাকা বাড়বে। বর্তমানে আয়কর ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ বাড়িয়ে এবার তা ৩০ শতাংশ করা হতে পারে।
৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পর চার লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ, পরের পাঁচ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ, পরের ২০ লাখ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ এবং অবশিষ্ট টাকার ওপর ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হতে পারে।
যারা প্রথম রিটার্ন জমা দেবেন তাদের জন্য সুবিধা থাকছে বাজেটে। নতুন করদাতাদের আয়ভেদে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। ন্যূনতম কর দেশের সব এলাকার জন্য ৫ হাজার টাকা করা হতে পারে।
২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছর পর্যন্ত সম্ভাব্য করহার ঘোষণা হতে পারে। এর ফলে করদাতা ও ব্যবসায়ীরা করবর্ষ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সম্ভাব্য করের হার আগেভাগেই জানতে পারবেন। কোম্পানি করের হারও থাকছে অপরিবর্তিত।
তবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কৃষি, মৎস্য ও পোল্ট্রি খাতে হ্রাসকৃত করহার উঠিয়ে নেওয়া হতে পারে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে
বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো হলেও জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের কর কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। বাজারমূল্যে দলিল নিবন্ধন উৎসাহিত করতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুবিধা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা লাভজনক হয়নি। নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না, রাজনৈতিকভাবেও এটা ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
কালোটাকা দুই ভাবে হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটা হলো অবৈধভাবে উপার্জন, আরেকটি নানান নীতিমালার কারণে আইনিভাবে উপার্জিত অর্থ কালো হয়ে যাচ্ছে। আবাসনে আমরা দেখেছি মৌজার দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হয় ওইটা অনেক কম থাকে। বিক্রির সময় অতিরিক্ত অর্থ অনেক সময় কালো হয়ে যায়।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, এইবার শুনছি মৌজার মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে। সেটা করা গেলে অপ্রদর্শিত থেকে যাচ্ছে যে সাদা টাকাটা সেটাও কমবে। তবে নীতিমালা যেখানে ঘাটতি আছে সেখানে হাত দেওয়া দরকার। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।
পরিবেশ সারচার্জ বাড়ছে, ২০০ পণ্যে বসছে অগ্রিম কর
উৎসে কর বিধিমালা, ২০২৪ অনুযায়ী এইচএস কোডযুক্ত ১৮৯ আমদানি পণ্যে কোনো উৎসে কর নেই। আবার ভুটান থেকে আমদানি হওয়া ৩৩ পণ্যেও উৎসে কর নেই। ২০১৩ সালে জিটুজি চুক্তি অনুযায়ী ভুটানের এসব পণ্য সব ধরনের কর ও শুল্কমুক্ত। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসব পণ্যে এক থেকে ২ শতাংশ হারে উৎসে কর তথা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বসাতে চায় সরকার।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল তুলা ও মানবসৃষ্ট তন্তু। আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডালের মতো কৃষিপণ্য, হুইলচেয়ার, এনজিওগ্রাফিক ও গাইড ক্যাথেটার, কৃত্রিম দাঁত, হিয়ারিং এইড নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, কম্পিউটারের মনিটর ইত্যাদি।
যদিও এনবিআরের দাবি আমদানি করা এসব পণ্যে উৎসে কর বসালেও পণ্যমূল্য বাড়বে না। কেননা অগ্রিম নেওয়া কর পরবর্তী সময়ে সমন্বয় (ক্রেডিট দেবে এনবিআর) করা হবে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির শর্ত হিসেবে ধাপে ধাপে করছাড় তুলে নেওয়া ও কর পরিপালন বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে
বাজেটে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। এর ফলে চাল, ডাল, আটা, লবণ, ভোজ্যতেলসহ একাধিক কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে পারে।
যাত্রীসেবার মান বাড়াতে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাসের জন্য আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। ফলে যাত্রীবাহী বাসের দাম কমতে পারে। বর্তমানে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাসের জন্য ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়।
পরিবেশবান্ধব পণ্য যেমন সুপারির খোল দিয়ে তৈরি তৈজসপত্র ও হাতে তৈরি মাটির পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি হতে পারে। এসব পণ্য কেনাকাটায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় ক্রেতাকে।
কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল ক্রয়ের জন্য স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের ওপর উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হতে পারে।
আগামী বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এছাড়া বাইরেও এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে বিদ্যুৎ, শিল্পের উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ব্যয় কমতে পারে।
স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবারে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হতে পারে। এছাড়া ই-বাইকের উৎপাদন ও উপকরণ আমদানি, ফ্রিজ-এসির কম্প্রেসার উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব আসতে পারে বাজেট প্রস্তাবনায়।
ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর বিদ্যুৎ ক্রয়ের কর, বিদেশি ক্রেতার এজেন্টের কমিশন বা পারিশ্রমিকের কর কমতে পারে। এছাড়া জমি ও ফ্ল্যাট বেচাকেনায় নিবন্ধন খরচ ও উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে।
এবার বাজেট প্রস্তাবনায় রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা কমতে পারে। ৩৯ সেবার ক্ষেত্রে এখন রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকছে। ১২ ধরনের সেবার ক্ষেত্রে শুধু টিআইএন দাখিল করলেই হবে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
ব্যবহার কমাতে প্লাস্টিক জাত হোম ও কিচেন ওয়্যারসহ প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের ভ্যাট দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে পারে সরকার। হেলিকপ্টার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হতে পারে। যার মধ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর থাকছে। এর ফলে হেলিকপ্টারে যাতায়াতে ভাড়া বাড়বে।
কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টারের সেবার ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের খরচ বাড়বে।
একাধিক গাড়ি থাকলে সিসিভেদে ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিবেশ সারচার্জের বিধান রয়েছে এখন। এটি বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে।
রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসির ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন উপকরণ- প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, চার্জার, ব্যাটারি, হাউজিং, কেসিংসহ অন্যান্য উপকরণে ভ্যাট ২ শতাংশের জায়গায় ৪ শতাংশ করা হতে পারে। এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাটহার বেড়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।
বাড়বে বাড়ি নির্মাণের খরচ। সিমেন্টশিট উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয় উৎপাদন পর্যায়ে এক হাজার টাকা প্রতি টন থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা প্রতি টন করা হতে পারে। ফেরো সিলিকন অ্যালয়ের উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি টনে ভ্যাট এক হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হতে পারে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সেবা পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। লিফট উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ করা ও নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।
ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকারসহ এ জাতীয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল। আসছে বাজেটে এসব পণ্যে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হতে পারে।
ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলারের ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হতে পারে।
এসব বিষয়ে কথা হয় প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভ্যাট বাড়লে প্লাস্টিক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিক্রি কমে যাবে, উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্লাস্টিকের পণ্য সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, ফেরিওয়ালারা এসব পণ্য বিক্রি করেন।
ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রোমার্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার বলেন, ভ্যাট দ্বিগুণ হলে ফ্রিজের দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা বাড়বে। এছাড়া এসির দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়ে যাবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো ঘুরে দাঁড়ায়নি। এই অবস্থায় এমন উদ্যোগে ক্রেতারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে পরিবর্তন আসছে। এতদিন এক লাখ টাকার বেশি রাখলে আবগারি শুল্ক কেটে নেওয়া হতো। এটা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে। ৩ লাখ টাকার বেশি রাখলে ১৫০ টাকা দিতে হবে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিনতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা উঠে যাচ্ছে এবার।
আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য শুধু কর নয়, সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশকেই সহায়ক করে তুলতে হবে। করপোরেট ট্যাক্স হার না বাড়িয়ে কর ফাঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের হয়রানি যেন না হয়, সেজন্য কর প্রশাসন সংস্কার দরকার।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে এমন কিছু রাখা যাবে না যা বিনিয়োগকারীদের চোখে অস্পষ্ট বা অনিরাপদ মনে হয়। বরং টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা, প্রযুক্তি ফান্ড তৈরি, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো দরকার।
অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাজেট সার্বিকভাবে বাস্তবসম্মত হতে হবে। বিলাসি লক্ষ্য থাকা উচিত হবে না। এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে যে আমাদের অর্থনীতির ওপরে যে ঝড়ঝাপটা বয়ে গেছে এখান থেকে যেন আমরা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারি। অতি উচ্চাভিলাষী বাজেট থাকলে ভালো আউটকাম দেয় না।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।