বাতাসে উৎকট গন্ধ, পড়ে আছে শিশুদের বই-ব্যাগ-জুতো

উত্তরার দিয়াবড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন যেন এক নিঃশব্দ মৃত্যুপল্লি। প্রতিদিন এই সময়ে যেখানে শিক্ষার্থীদের কোলাহল-প্রাণচঞ্চলতা, সেখানে এখন শুধুই সুনসান নীরবতা। স্কুলভবনের করিডোরে নেই ছোট ছোট পায়ের দৌড়ঝাঁপ। নীরব ক্যাম্পাসের বাতাসে ভাসছে উৎকট গন্ধ। 

স্কুলের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের বই, খাতা, ব্যাগ, জুতো, পানির বোতল, এমনকি কয়েকজন শিক্ষার্থীর আঁকা ছবি। যেসব কোমল হাতে এসব বই-খাতা ধরেছিল, তাদের অনেকে আজ না-ফেরার দেশে কিংবা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেমে এসেছে গভীর শোক ও নীরবতা।

আরও পড়ুনঃ রক্ত দিতে বার্ন ইনস্টিটিউটে মানুষের ঢল, নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতার সংখ্যা বেশি

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসের প্রাথমিক শাখার ভবন ঘুরে দেখা যায়, এখনও সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে বিভীষিকাময় ঘটনার নানা চিহ্ন। তৃতীয় শ্রেণির ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’, ‘বাংলা ব্যাকরণ’সহ একাধিক বই অর্ধপোড়া অবস্থায় পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের পাশে। খাতার পাতাগুলো আগুনে ঝলসে গেছে, কারও নাম লেখা মলাট এখনও দৃশ্যমান। সিঁড়ির পাশে পড়ে আছে ছোটদের স্কুলব্যাগ, চারদিকে পোড়া কাগজ ও প্লাস্টিকের গন্ধ।

উপস্থিত অভিভাবক ও উৎসুক জনতার চোখেমুখে আতঙ্ক, ক্ষোভ আর গভীর বেদনার ছাপ স্পষ্ট। শাহনাজ শরিফ নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘এগুলো আমাদের সন্তানের বই। গতকালও তারা এই স্কুলেই পড়াশোনা করছিল। আজ শুধু ছাঁই আর ধোঁয়া। স্কুল তো নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা—আজ সেটাই মৃত্যুফাঁদ হয়ে গেল।

স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর মিঞা, যিনি দুর্ঘটনার সময় উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন, বলেন, ‘আমি ছোটদের আর্তনাদ শুনে দৌড়ে এসেছিলাম। ধোঁয়ার মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যারা বেঁচে ফিরেছে, তারা বলছে—ভেতর থেকে বের হওয়ার পথই খুঁজে পায়নি।’

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুর ১টার কিছু পর উত্তরার দিয়াবড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আঘাত হানে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় বিমান ও ভবনে। যেসব শিক্ষার্থী তখন ক্লাসে ছিল, তাদের অধিকাংশই হতাহত হয়।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ