বিকাশের ডোনেশন সেবায় দাতা-গ্রহীতার মেলবন্ধন

  • বিকাশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে অনুদান দেওয়া কয়েকটি ট্যাপের ব্যাপার
  • ৪০টি দাতব্য ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দেওয়ার সুযোগ
  • অনুদান পাঠানো এখন আরো সহজ, নিরাপদ, তাৎক্ষণিক
  • অনুদানের অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে সে তথ্য জানার সুযোগ
  • গ্রাহক চাইলে নিজের পরিচয় গোপন রেখেও অনুদান দিতে পারছেন
  • সারাদেশের মানুষের ক্ষুদ্র অনুদানে হাসি ফুটছে লাখো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে

যার সাহায্য প্রয়োজন আর যিনি সাহায্য দিতে চান তাদের মধ্যে দূরত্ব এখন আর বাধা নয়। দাতা-গ্রহীতার মধ্যে এই দূরত্ব দূর করে বিকাশের মতো প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে মানবিক ও সামাজিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বিশ্বস্ত মাধ্যম। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দূরত্বের দেয়াল ভেঙে, মানুষের ভালোবাসা পৌঁছে যাচ্ছে সঠিক ঠিকানায়। উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে, দানের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিকাশ এনেছে আমূল পরিবর্তন; নিশ্চিত করছে প্রতিটি সাহায্য যেনো দ্রুত আর নিরাপদে পৌঁছে যায় সঠিক মানুষের কাছে।

যার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার কাছে দানের টাকা পৌঁছানো একটা সময় কঠিন ছিল। তবে এখন বিকাশের গ্রাহক-বান্ধব ডোনেশন ইন্টারফেস এই বাধাগুলো দূর করেছে। স্মার্টফোনের কয়েকটি ট্যাপেই ৪০টি সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি অসহায় মানুষের জন্য সাহায্য পাঠানো যাচ্ছে। ‍যিনি দান করছেন তার জন্য দানের প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায়, মানবিকতার প্রকাশ এখন আরও সাবলীল হয়েছে এবং আরো বেশি মানুষ তার সাধ্যমতো দান করছেন।

বাড়িতে থাকা পরিবারকে একটু বেশি টাকা পাঠানোর জন্য নিজের সেহেরি-ইফতার মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মেহমানখানায় সারেন ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা মোমিন আলী। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মোমিন বলেন, কোনরকম বাদাম বিক্রি করে সংসার চলে, খাবারের জন্য চিন্তা করতে হয় না, এইটা বড় রহমত। রমজান মাসে সুবিধাবঞ্চিত এমন লাখো মানুষের সেহরি-ইফতার নিশ্চিন্ত, নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে মাস্তুল ফাউন্ডেশন, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, মজার স্কুল, জাগো ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট সহ নানান সেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিদিন লাখো মানুষ সেহরি-ইফতার এই নিশ্চয়তার সঙ্গে জুড়ে আছেন সারাদেশের নানা প্রান্তের অসংখ্য দাতা। দাতা-গ্রহীতার এই সেতুবন্ধনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুদান সেবা। অসংখ্য মানুষের ক্ষুদ্র অনুদানকে একত্রিত করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর কাজকে গতিশীল রাখে বিকাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবা প্ল্যাটফর্মগুলো।

বিকাশের ডোনেশনের বদৌলতে যাদের জীবনে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে, তাদের একজন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের শাহিদা। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই সন্তানের মা, স্বামী-পরিত্যক্তা শাহিদার জীবনের গল্পটি কঠিন বাস্তবতার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। দুই সন্তানকে নিয়ে চলছে তার জীবনসংগ্রাম।

‘গ্রামেই থাকি। ২০ বছর হইছে একদিনও শ্বশুরবাড়ি যাওনের ভাগ্য হয় নাই। সংসার করা আমার কপালেই নাই’—বলতে বলতে নিজের ছাপড়া ঘরটার দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকান শাহিদা। বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মেয়ের দায়িত্ব নিলেও, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার খরচ জোগানো তার সাধ্যের বাইরে ছিল। নিজে দিনভিত্তিক কাজ করলেও সেই আয়ে চিকিৎসা সেবা চালানো প্রায় অসম্ভব। সঠিক চিকিৎসার অভাবে তার বড় ছেলে আল-আমিনের ১৫ বছর বয়সেও শারীরিক বৃদ্ধি হয়নি। সন্তানদের বাঁচাতে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি।

শাহিদার এই কঠিন সংগ্রামে পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের যাকাত ফান্ডের টাকায় এখন সুচিকিৎসা পাচ্ছে তার সন্তানরা। সারাদেশ থেকে বিকাশ এর মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে আসা দান কাজে লাগিয়ে, এই ফাউন্ডেশন শাহিদার সন্তানদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। শাহিদার মতো এমন হাজারো অসহায় অভিভাবক থ্যালাসিমিয়া আক্রান্ত সন্তানদের নিয়ে থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আসেন একটু সহযোগিতা পাওয়ার আশায়।

থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ডাক্তার জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, এই ফাউন্ডেশনে সাড়ে সাত হাজার নিবন্ধিত রোগী রয়েছে, যাদেরকে চিকিৎসা সেবা এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে যেকোন পরিমানের টাকা অনুদান দেওয়া যায়, যেকোন ব্যক্তি তার সামর্থ্য অনুযায়ী অনুদান দিতে পারেন। বিভিন্ন ভাবেই অনুদানের অর্থ দিতে পারেন। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে দাতা তার সাধ্যমতো যতটুকু টাকা পাঠাতে চান তার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো বিকাশ।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ার পাঠ চুকিয়ে সবে চাকরি পেয়েছে আসমা। আসমা বলে আমার মনে হয় শিক্ষা একজন মানুষের-ই নয়, একটা পরিবারের ও মুক্তি আনতে পারে। আমার স্বল্প সামর্থ্যে তাই আমি প্রতিমাসে অভিযাত্রিকর শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু অনুদান পাঠাই। বিকাশের মাধ্যমে এই অনুদান পাঠানোর ব্যবস্থা আমাকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা সবাই যদি আমাদের সাধ্যমত এভাবে দান করি তাহলে যাদের প্রয়োজন তারা সবাই সহায়তা পেতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস।

বিকাশ-এ কোন কোন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিতে পারছেন

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ডুনেশন ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, এসো সবাই, খুকুমনি ফাউন্ডেশন, ফ্রেন্ডশিপ, হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, হাসাপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম, প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ত্রাণ তহবিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ত্রাণ তহবিল, ব্র্যাক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বিএনএফডব্লিউ ডোনেশন ফান্ড, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাস্ট, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ত্রাণ তহবিল, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পরিবার কল্যাণ সংঘ অনুদান ফান্ড, টিএমএসএস, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, অ্যাকশন এইড, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন (যাকাত), আইসিডিডিআর,বি, জাগো ফাউন্ডেশন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বিদ্যানন্দ, মির্জাপুর এক্স ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশন, মজার ইশকুল, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, প্রথম আলো ট্রাস্ট, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, সাফল্যময় সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা, শক্তি ফাউন্ডেশন, এসওএস চিলড্রেন ভিলেজ বাংলাদেশ, তাসাউফ ফাউন্ডেশন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন- এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহজেই অনুদান দিতে পারছেন মানুষ। বিকাশের মাধ্যমে ডোনেশনের বিস্তারিত জানতে পারেন এই লিংক-এ: https://www.bkash.com/products-services/donation।

কীভাবে দেবেন!

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিতে গ্রাহককে বিকাশ অ্যাপের ‘ডোনেশন’ আইকনে ক্লিক করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানকে অনুদান দিতে চান তা নির্বাচন করে নাম, ই-মেইল আইডি ও অনুদানের পরিমাণ উল্লেখ করে সাবমিট করতে হবে। গ্রাহক চাইলে ‘পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক’ অপশন নির্বাচন করে নিজের পরিচয় গোপনও রাখতে পারবেন। পরের ধাপে বিকাশ পিন নম্বর দিয়ে অনুদান কার্যক্রম শেষ করার পর একটি প্রাপ্তিস্বীকারপত্র পেয়ে যাবেন গ্রাহক। যে প্রতিষ্ঠানে গ্রাহক অনুদান দিচ্ছেন সে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাবে প্রতিষ্ঠানটির নামের নিচে ‘আরো জানুন’ অংশে ক্লিক করে। আবার অনুদানের অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে সে তথ্য জানার জন্য অনুদান শেষে প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে দেয়া ই-মেইলে যোগাযোগ করতে পারবেন দাতারা। বিকাশ অ্যাপের পাশাপাশি গ্রাহক চাইলে ওয়েব ঠিকানা থেকেও পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনুদান বিকাশ করতে পারবেন গ্রাহকরা।