বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার: ভারতে ধস, চীনে ঊর্ধ্বগতি

ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। বিপরীতে চীনে এই লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

২০২৪ সালের মে মাসে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে লেনদেন হয়েছিল ৭৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২০২৫ সালের মে মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, এ সময়ে ভারতে লেনদেন কমেছে ৫৫ কোটি টাকা। এমনকি মাসিক হিসাবেও পতন দেখা গেছে—এপ্রিলে যেখানে লেনদেন ছিল ৩১ কোটি, মে মাসে তা নেমেছে ২১ কোটিতে।

এই ধসের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিবর্তনকে। গত বছরের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসায় কড়াকড়ি আরোপ করে। এর ফলে ভারতে ভ্রমণ ও খরচ—দু’টিই কমে গেছে। ফলে একসময় সর্বোচ্চ লেনদেনকারী দেশ ভারত এখন নেমে এসেছে ৭ নম্বরে।

অন্যদিকে, চীনে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসে চীনে এই লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ৪ লাখ টাকায়, যেখানে এপ্রিলে তা ছিল ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা। মাত্র এক মাসে লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি টাকার বেশি। আশ্চর্যের বিষয়, গত বছরের মে মাসে চীনের নাম ছিলই না শীর্ষ লেনদেন তালিকায়—আর এবার দেশটি উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের মে মাসে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের নাগরিকরা মোট ৩৮৬ কোটি ৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। আগের মাস এপ্রিলের তুলনায় যা ৮১ কোটি ২ লাখ টাকা কম। এমনকি গত বছরের মে মাসের তুলনায়ও ৭০ কোটি টাকার ঘাটতি দেখা গেছে, যেখানে তখনকার লেনদেন ছিল ৪৫৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।

বিদেশে বাংলাদেশি কার্ডধারীদের খরচের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র—৫৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। এরপর রয়েছে চীন (৪০ কোটি), থাইল্যান্ড (৩৫ কোটি), যুক্তরাজ্য (৩৪ কোটি), সিঙ্গাপুর (৩২ কোটি), মালয়েশিয়া (২৪ কোটি), নেদারল্যান্ড ও সৌদি আরব (১৭ কোটি করে), কানাডা (১৬ কোটি), ইউএই (১৩ কোটি) এবং অস্ট্রেলিয়া (১২ কোটি টাকা)। অন্যান্য দেশে খরচ হয়েছে ৬৭ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর অনেক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ হয়েছে। ফলে অনেকের কার্ড কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এমনকি অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও বিদেশে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে এসে বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে। এপ্রিল মাসে যেখানে এই খরচ ছিল ২৬২ কোটি টাকা, মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৭ কোটি টাকায়। ১৫ কোটি টাকার এই বাড়তির পেছনেও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে শীর্ষে—দেশটির নাগরিকরা খরচ করেছেন ১১৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাজ্য (২১ কোটি) এবং তৃতীয় অবস্থানে ভারত (১৬ কোটি) রয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরেও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এপ্রিল মাসে যেখানে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা, মে মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা—মাত্র এক মাসে ২০৪ কোটি টাকার প্রবৃদ্ধি।