দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে শুরু হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ বিভাগ ‘তারকার পূজা’। উদযাপনের স্মৃতি ও পরিকল্পনা জানাচ্ছেন আপনাদের পরিচিত মুখেরা। এবার পূজা নিয়ে লিখলেন টালিউড অভিনেত্রী নুসরাত জাহান।
এ অভিনেত্রী লিখেছেন— ছোট থেকেই দুর্গাপূজার সঙ্গে একটা আনন্দের আমেজ জড়িয়ে থাকে। পূজা মানেই ছুটি। পূজা মানেই শহরের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদেরও সেজে ওঠার সময়। তার থেকেও বড় কথা— পূজা মানেই দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। কারণ মা আসছেন।
তিনি বলেন, পূজা আসছে শুনলেই মনের মধ্যে একটা অন্য রকমের ভালোলাগা তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের কাছে পূজা অন্য রকম অনুভূতি। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকা। কিন্তু পূজা এলেই তো ঝড়ের গতিতে দিনগুলো কেটেও যায়। তার পর খুব মন খারাপ হয়।
এ অভিনেত্রী বলেন, পূজার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। মনে আছে— ছোটবেলায় আমাদের কনভেন্ট স্কুলে একটু কম ছুটি দেওয়া হতো। কিন্তু তার মধ্যেও চেষ্টা করতাম যতটা সম্ভব আনন্দ করে নিতে। আমার মাসির বাড়ি বেহালায়। তাই ভাইবোনেদের নিয়ে একসঙ্গে ঠাকুর দেখার স্মৃতি আজও আমার মনে টাটকা। তখন তো সুযোগ পেলে কখনো বাইকে, কখনো আবার বাসে চড়ে এলাকা ভাগ করে ঠাকুর দেখতাম। তখন নতুন জুতায় পা কেটে যাচ্ছে বা খিদে পাচ্ছে কিনা— এসব মাথায় আসত না। একদিন সারারাত ঠাকুর দেখে যদি শরীর খারাপ করত, তা হলে পরের দিন বিশ্রাম। তার পর আবার ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়া। সেসব দিন খুব মিস করি। তবে পূজার মধ্যে একটা দিন নির্দিষ্ট থাকত। সেদিন বাবা আমাদের নিয়ে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যেতেন। আমি ছোট থেকেই খুব জেদি। মনে আছে— একবার বাবা বললেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি, ততক্ষণ ঠাকুর দেখতে হবে। বাড়ি ফেরা যাবে না!
নুসরাত বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পূজার দিনগুলোও বদলে গেছে। এখন তো অতিথি হিসেবে বহু পূজায় যেতে হয়। ঠাকুরও দেখা হয়ে যায়। তবু চেষ্টা করি সময় করে ভিড় এড়িয়ে ঠাকুর দেখার। পূজার সঙ্গে বাঙালির পেটপূজাও জড়িয়ে। পূজার সময়ে রাস্তার দুই পাশের ফাস্টফুডের স্টলগুলো আমাকে খুব টানে। তিনি বলেন, এই প্রসঙ্গে গত বছরের একটা অভিজ্ঞতা না জানালেই নয়। আমি আর যশ ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। যশকে ভিড়ের মধ্যে ধীরে ধীরে গাড়িটা চালাতে বলে আমি টুক করে নেমে পড়েছিলাম। পরবর্তী গন্তব্য ঘুগনির দোকান। যশ বুঝতেও পারেনি। আমাকে দেখে মানুষের ভিড়। সবার সঙ্গে ছবিও তুলেছিলাম। কিন্তু আমার হাতে তখনো ঘুগনির প্লেট!
তিনি আরও বলেন, পূজার আগে আমার আর যশ—দুজনেরই ব্যস্ততা তুঙ্গে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওকে বলেছি, সময় করে আমাকে নিয়ে একটু বেরোতে। মা, বাবা এবং বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করতে হবে। ব্যস্ততার জন্য প্রতি বছর পূজার কেনাকাটা শেষ মুহূর্তেই সময় পাই। ঈশানের এখন সাড়ে তিন বছর বয়স। অনেকটাই বড় হয়েছে। গত বছর ওকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলাম। ও মণ্ডপের আলোকসজ্জা দেখতে খুব পছন্দ করে। গত বছর ঢাকের তালে একটু-আধটু নেচেওছে। দেখেছি, এখন ও পূজা বিষয়টা একটু বোঝার চেষ্টা করে। ‘দুগ্গা আসছে’-গোছের অল্পবিস্তর কথাও বলছে। এবার কী করে, দেখা যাক। পূজায় বাচ্চাদের নিয়ে একটা দিন সময় কাটানোর পরিকল্পনা তো থাকবেই। তা ছাড়া আমরা সময় বার করতে না পারলেও দাদুরা ঠিকই নাতিদের নিয়ে ঠাকুর দেখাতে বেরিয়ে পড়বেন।
এ অভিনেত্রী বলেন, পূজায় সাধারণত আমি আর যশ কলকাতায় থাকার চেষ্টা করি। কারণ কাজের বাইরে আমাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাই। তা ছাড়া আমাদের অনেক বন্ধু বছরের এই চারটে দিনই শহরে আসেন। তাদের সঙ্গেও দেখা করার সুযোগ পাই। একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে খুব ভালো সময় কাটে।
প্রত্যেক বছর অষ্টমীর দুপুরে আমি ভোগ খেতে খুব ভালোবাসি। একশবার হয়তো তার জন্য আমাকে কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে! কিন্তু তারপরও অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দিই, আগামী দিনেও অঞ্জলি দেব। কারণ বিশ্বাস কোনো ধর্মের ওপর নির্ভর করে না। কোনো ভাষার ওপরেও নির্ভর করে না। বিশ্বাস মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ট্রলিংকে আমি পাত্তা দিই না। কারণ প্রত্যেকের তার নিজের মতো জীবনযাপনের স্বাধীনতা রয়েছে। কেউ অন্যের জীবনযাপনের শর্ত নির্ধারণ করে দিতে পারে না। আমি সামাজিকমাধ্যমে দেখেছি— নারীদের একটু বেশিই ট্রল করা হয়। চারটে লাইন লিখে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের চিনিও না, জানিও না। তাই পাত্তাও দিই না।
নুসরাত বলেন, এবারের পূজা নিয়ে নানা মন্তব্য কানে আসছে। আমার মতে, পূজা অন্য রকম হয় না। তার মেজাজ অন্য রকম হতেই পারে। আমরা অন্য রকমের একটা সময়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি, ঠিকই। কিন্তু আমার মতে, পূজার সঙ্গে জড়িত মানুষের আমেজ নষ্ট হয় না। মা আসছেন। প্রতি বছরের মতো এবারেও তার সামনে দাঁড়াব। সবার জন্য মঙ্গলকামনা করব। আমার শহরটা কঠিন সময়ের সঙ্গে লড়ছে। মা যেন প্রত্যেকের জীবনে শান্তি পৌঁছে দেন।
সেই সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের জন্য শারদীয়ার শুভেচ্ছা।