বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ দ্বীপ

এই বিশ্বে দ্বীপের অভাব নেই। তবে আকারে বড় দ্বীপের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এমনকি কয়েক হাজার দ্বীপ মিলিয়ে গড়ে উঠেছে এমন দেশও আছে। আবার একটি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এমন দেশও আছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ কোনটি এটি নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। দ্বীপের সংজ্ঞা বিবেচনা করলে অস্ট্রেলিয়াও একটি দ্বীপ হওয়ার কথা। কারণ কোনো ধরনের ভূ-ভাগের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এর। তবে একে একটি মহাদেশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তাই আমাদের তালিকায় থাকছে না এটি। চলুন তবে পরিচিত হওয়া যাক আয়তনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ দ্বীপের সঙ্গে।

গ্রিনল্যান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের আয়তন ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটার। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের অন্তর্গত গ্রিনল্যান্ডের অবশ্য অভ্যন্তরীণ বিষয় দেখভালের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকার আছে।

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এলাকাটি মহাদেশের মর্যাদা না পাওয়ার একটি কারণ হতে পারে এর জনসংখ্যা। আয়তনে বিশাল হলেও এর জনসংখ্যা মোটে ৫৫ হাজার। এদের বেশির ভাগই ইনুইট আদিবাসী। শীতল এলাকায় বাস করা এই জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের দেখা মেলে কানাডা এবং আলাস্কায়ও। ইনুইটরা এস্কিমো নামেও পরিচিত।

গ্রিনল্যান্ডের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই আছে হিমবাহ। মেরু এলাকার বাইরে এত বিশাল সব হিমবাহ পাবেন না আর কোথাও। দ্বীপটির প্রধান শহরগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এমন কোনো সড়কও পাবেন না। মাছ ও সিল ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার অধিবাসীদের বড় একটি অংশ। অনেকে দেশটি ভ্রমণে যান বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান নর্থইস্ট গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক দর্শনে।

নিউ গিনি
আট লাখ ২১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারের বিশাল এ দ্বীপটি পড়েছে দুই দেশের সীমানায়। এগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া এবং পাপুয়া নিউগিনি। বছরের ৩০০-ইঞ্চির বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে গভীর অরণ্য এবং নানা জাতের বন্যপ্রাণীর দেখা পাবেন। তবে সে তুলনায় জনসংখ্যা কম।

বিশ্বের জনবহুল ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান কতবিশ্বের জনবহুল ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান কত
৪০ হাজার বছরেরও বেশি আগে এখানে প্রথম মানব বসতি গড়ে উঠে। তামা এবং সোনার বিশাল মজুতের জন্য সাগর পেরিয়ে বারবারই এখানে অনুসন্ধান চালাতে এসেছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ।

বোর্নিও
সবচেয়ে বড় দ্বীপের তালিকায় বোর্নিওর অবস্থান তিনে। এর আয়তন সাত লাখ ৪৮ হাজার ১৬৮ বর্গকিলোমিটার। এটি বিশ্বের একমাত্র দ্বীপ যা অঞ্চলভেদে নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি দেশ, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া।

গভীর অরণ্যে আচ্ছাদিত দ্বীপটিতে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেখা মেলে। যেমন বোর্নিও ওরাং ওটাং এবং দায়াক ফলখেকো বাদুড়দের পাবেন কেবল এ দ্বীপেই। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে সান্দ্রা মেঘলা চিতা ও বোর্নিও পিগমি হাতি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের ফুলের দেখা পাবেন দ্বীপটিতে। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো চিরসবুজ বন, যা ১০ কোটি বছরের পুরোনো, বাড়িয়েছে জায়গাটির মর্যাদা।

অরণ্যময় এলাকা হিসেবে বোর্নিও দ্বীপের জনসংখ্যা একেবারে কম নয়। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ জানাচ্ছে দ্বীপে বাস দুই কোটি ১২ লাখ ৫৮ হাজার মানুষের।

মাদাগাস্কার দ্বীপ
বিচিত্র সব বন্যপ্রাণী ও গাছপালার জন্য বিখ্যাত মাদাগাস্কার দ্বীপের অবস্থান বৃহত্তম দ্বীপের তালিকায় চারে। এর আয়তন পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা তিন কোটি ২০ লাখের আশপাশে।

আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে ভারত মহাসাগরের মাঝখানে এর অবস্থান। প্রায় আড়াই লাখ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাস এখানে। মজার ঘটনা এগুলোর তিন ভাগের দুই ভাগই আর কোথাও পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে যে ৪০ প্রজাতির লেমুর আছে এর সবগুলোই আছে মাদাগাস্কারে। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, লেমুর হলো গাছে বাস করা লোমশ এক ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানুষ এবং বানরদের মতো এরাও প্রাইমেট।

মাদাগাস্কারের প্রবাল রাজ্যও মুগ্ধ করে মানুষকে। ভারত মহাসাগরের উষ্ণ জলে সাঁতার কাটা ও প্রবালের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখার জন্য পর্যটক এবং ডুবুরিদের প্রিয় জায়গা এটি।

বাফিন
উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার সবচেয়ে বড় দ্বীপ বাফিন বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপের তালিকায় আছে পাঁচে। আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপটির আয়তন পাঁচ লাখ ৭ হাজার ৪৫১ বর্গকিলোমিটার।

সতেরো শতকের ব্রিটিশ অভিযাত্রী উইলিয়াম বাফিনের নামে নামকরণ করা দ্বীপটি পড়েছে উত্তর কানাডার নুনাভাট অঞ্চলে। উপকূলীয় কিছু কিছু ছোট ছোট গ্রাম ছাড়া মোটামুটি জনবসতিহীন এলাকা এটি। দ্বীপের মোট জনসংখ্যা ১৩ হাজারের কিছু বেশি।

সামুদ্রিক খাঁড়ি, স্বাদু পানির হ্রদ এবং হিমবাহে ভরপুর জাতীয় উদ্যান মিলিয়ে জায়গাটি দেখার মতো। তবে চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর কারণে দ্বীপটি মানুষের জন্য বৈরী। এখানকার গড় বার্ষিক তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আর্কটিক সার্কেলের কাছেই এর অবস্থান। এ করণে নর্দার্ন লাইট, আর্কটিক নেকড়ে, মেরু ভালুক দেখার জন্য এখানে পাড়ি জমান কোনো কোনো পর্যটক।

সুমাত্রা
বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দ্বীপ সুমাত্রার আয়তন চার লাখ ৪৩ হাজার ৬৬ বর্গকিলোমিটার। এটি এমন এক জায়গায় অবস্থিত যেখানে ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান এবং ইউরেশিয়ান টেকটনিক প্লেট একটি আরেকটিতে অতিক্রম করে গেছে। এ কারণে এখানে ভূমিকম্প এবং সুনামি মোটামুটি স্বাভাবিক ঘটনা।

বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্যের জন্য নাম আছে সুমাত্রা দ্বীপের। সুমাত্রা বাঘ, সুমাত্রা গন্ডার এবং সুমাত্রা ওরাংওটাং এখানকার উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী। জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি না হলেও অরণ্য এলাকা হিসেবে একেবারে কমও নয়। দ্বীপটিতে ছয় কেটির মতো মানুষের বাস।

হনশু
জাপানের মূল চারটি দ্বীপের মধ্যে বৃহত্তম হনশু। জাপান সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত হনশুর আয়তন দুই লাখ ২৭ হাজার ৮৯৮ বর্গকিলোমিটার।

গোটা জাপানের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে থাকা হনশু দ্বীপের মধ্যে পড়েছে টোকিও, হিরোশিমা এবং ওসাকার মতো বিখ্যাত শহর। দ্বীপটিতে দশ কোটি ৩০ লাখের মতো মানুষের বাস। জাপানের উচ্চতম পর্বত মাউন্ট ফিজি এবং সবচেয়ে বড় হ্রদ বিওয়ার অবস্থানও এ দ্বীপে।

ভিক্টোরিয়া
দুই লাখ ১৭ হাজার ২৯১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভিক্টোরিয়া কানাডীয় আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে অবস্থিত। এই দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত দ্বীপগুলির মধ্যে এর চেয়ে বড় কেবল বাফিন দ্বীপ।

রানি ভিক্টোরিয়ার নামে নামকরণ করা দ্বীপটির স্থায়ী জনসংখ্যা দুই হাজারের কিছু বেশি। আর্কটিক অভিযাত্রী টমাস সিম্পসন ১৮৩৮ সালে দ্বীপটি আবিষ্কার করেন।

গ্রেট ব্রিটেন
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস— এই তিনটি দেশ নিয়ে গড়ে উঠেছে গ্রেট ব্রিটেন নামের দ্বীপটি। আয়তন দুই লাখ ৯ হাজার ৩৩১ বর্গকিলোমিটার। ইউনাইটেড কিংডমের অন্তর্গত দ্বীপটি। এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম এবং ইউনাইটেড কিংডমের সবচেয়ে বড় দ্বীপ।

ইউরোপের বৃহত্তম এই দ্বীপটিকে মহাদেশের মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ইংলিশ চ্যানেল ও উত্তর সাগর। দ্বীপটির পুরোনো ইতিহাসের চিহ্ন পাবেন স্টোনহেঞ্জ এবং মধ্যযুগীয় সব দুর্গে। ইউরোপের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা গ্রেট ব্রিটেনের জনসংখ্যা ছয় কোটি ৯০ লাখের বেশি।

এলেসমেরে
তালিকায় দশে থাকা দ্বীপ এলেসমেরের আয়তন এক লাখ ৯৬ হাজার ২৩৬ বর্গকিলোমিটার। কানাডীয় আর্কটিক দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এ দ্বীপটির নামকরণ হয় ১৮৫২ সালে, এলেসমেরর প্রথম আর্ল ফ্রান্সিস এগারটনের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ধারণা করা হয় দশম শতাব্দীতে ভাইকিংরা দ্বীপটিতে আসে।

দুর্গমতা এবং বৈরী জলবায়ুর জন্য জায়গাটিতে বাস করা কঠিন। মাত্র ১৪৪ জন মানুষের বাস কানাডার নুনাভাট অঞ্চলের অন্তর্গত এ দ্বীপটিতে। বাফিন উপসাগর এবং আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত এলেসমেরের বেশির ভাগ এলাকা জুড়েই ঢেউখেলানো পাহাড় আর বরফের রাজত্ব।

সূত্র: ব্রিটানিকা, ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ, ট্যুরোপিয়া, উইকিপিডিয়া, ট্রাভেল ডট আর্থ