টানা বৃষ্টিতে খুলনা নগরীর বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সিটি করপোরেশনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম না থাকায় এমন জলাবদ্ধতা বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
নগরবাসীর অভিযোগ, অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়কে বর্ষা হলেই হাঁটুপানি জমে। আর এখন বর্ষাকালে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে স্কুল, কলেজ কিংবা কর্মস্থলে সময়মতো যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে মালপত্রও নষ্ট হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমন বেহাল দশা নগরীর। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এটি নতুন কিছু না।
আরও পড়ুনঃ ১২ ঘণ্টার মধ্যে লঘুচাপ সৃষ্টির শঙ্কা, সারাদেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস
সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকে ও মঙ্গলবারের (৮ জুলাই) টানা বৃষ্টিপাতে এমন সমস্যার তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিপাতে নগরীর টুটপাড়া, রয়েল মোড়, মিস্ত্রিপাড়া, খালিশপুর, নিউ মার্কেট এলাকা, বাস্তুহারা এলাকা, শান্তিধাম মোড়, দিলখোলা রোড, পূর্ব বানিয়া খামার, বসুপাড়া, ফুলবাড়ি গেট, আলমনগর, মুজগুন্নি আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। রুপসা এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে হাঁটুপানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী ও সাধারণ মানুষ। যানবাহন চলাচলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।
কেসিসি সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। যাতায়াতের জন্য সড়ক রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২১৫টি। পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল রয়েছে ১৩টি। ড্রেন রয়েছে প্রায় ৫৪২ কিলোমিটার। ড্রেন ও খাল সংরক্ষণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিটি করপোরেশন ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ ও ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়নে কাজ শুরু করে। সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত পাঁচ বছরে এই দুই প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। যার মধ্যে অধিকাংশ কাজ শেষ। কিছু কাজ চলমান রয়েছে।
বয়রা মুজগুন্নি এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটুপানি ওঠে, আর এখনতো বর্ষাকাল। আবাসিক এলাকার অনেক রাস্তা আর ড্রেন পানিতে এক হয়ে গেছে। জনগণের ভোগান্তিতো সিটি করপোরেশন লাঘব করতে পারছে না। এবার মনে হচ্ছে জলাবদ্ধতার সমস্যা আরও বেড়েছে। আমরা এ সমস্যা নিরসন চাই।
টুটপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তা আর ড্রেনের সমস্যা আমাদের নিত্যসঙ্গী। সামান্য বৃষ্টিতে যেখানে পানি ওঠে, সেখানে এখন বর্ষাকালে কী অবস্থা হতে পারে তা সবার জানা। খুলনা সিটি করপোরেশন এই সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ। সিটি করপোরেশন প্রয়োজন হলে দায়িত্ব থেকে সরে অন্য কোনো দপ্তরকে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব তুলে দিক।
রূপসা এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, রাস্তা আর ড্রেনের সমস্যাতো এক-দু’দিনের না। কয়েক যুগের সমস্যা। খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকা এক সময় পৌরসভা ছিল। তখন থেকেই এই সমস্যা। কিন্তু সিটি করপোরেশন কখনোই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। শুধু দেখি ড্রেন আর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। তাও তো জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা হাসিব হাসান বলেন, ড্রেন থেকে পানি নদীতে যাওয়ার বদলে উল্টো নদীর পানি মনে হয় ড্রেন দিয়ে শহরে ঢোকে। জলাবদ্ধতা এ শহরের স্থায়ী সমস্যা। সবসময় দেখি শুধু রাস্তা আর ড্রেন খোঁড়াখুঁড়ি চলতেই থাকে। সিটি করপোরেশন মনে হয় গুপ্তধন খুঁজছে। সমাধান খুঁজছে না।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, জলাবদ্ধতা খুলনা নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা। জলাবদ্ধতা এ বছর দ্বিগুণ মাত্রার রূপ ধারণ করেছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকা এবং দূরদর্শিতার অভাবে জলাবদ্ধতা এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। খুলনা সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে সিটি করপোরেশনকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে ড্রেনেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। আমরা যতই ড্রেন নির্মাণ করি, যদি আবর্জনা পরিষ্কার না হয়, জলাবদ্ধতা কমবে না। নতুন একটি প্রকল্পে স্লুইচ গেট ও পাম্প হাউস বসানোর পরিকল্পনা আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।