বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নবনির্বাচিত কমিটির আত্মপ্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবনির্বাচিত কমিটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ দাবি করেছে সংগঠনটির নেতারা।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুনঃবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নবনির্বাচিত সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশিদ) বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ঘোষিত এক দফা ছিল শুধু রেজিম পরিবর্তন নয়, বরং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, ‘বাংলাদেশ ২.০’ গড়ার ঐতিহাসিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। তবে এখন ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা’র নামে সেই ঐতিহাসিক অর্জনকে পুরোনো রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্পষ্ট করেছে, তারা এ প্রক্রিয়া মেনে নেবে না এবং গণসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় নতুন সংবিধান ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের রাজনীতিকে বেগবান করবে।

সংবাদ সম্মেলনে রিফাত রশিদ সংগঠনের খসড়া ইশতেহার পাঠ করেন। খসড়া ইশতেহারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ প্রদানের দাবি তোলেন।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে

জুলাই ঘোষণাপত্র

১. অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক প্রতিশ্রুত জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে এবং এটির সাংবিধানিক ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরু থেকে নতুন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সব কর্মকাণ্ডকে সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জুলাই সনদ: বিচার ও সংস্কার

৩. নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে নয়; নির্বাচনের আগেই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সংস্কার করবে না; সংস্কারের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই সর্বসম্মতিক্রমে সংস্কার বাস্তবায়নের পথ-পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র রাজনৈতিক দল নয়; জনগণের মতামত গ্রহণের কার্যকর পথ-পদ্ধতি বের করতে হবে।

৪. প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ গোষ্ঠীস্বার্থে ঐকমত্য হচ্ছে না অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ, এমন সংস্কার প্রস্তাবগুলোসহ সব সংস্কার প্রস্তাব জুলাই সনদে সন্নিবেশিত করে তা গণভোটে পাঠাতে হবে।

৫. জুলাই সনদকে পুনর্লিখিত বা সংস্কারকৃত সংবিধানের অংশ করতে হবে তথা সংবিধানের পরিশিষ্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৬. জুলাই সনদে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ১৫ বছরের সব হত্যাকাণ্ড, ভোট ডাকাতি, গুম, ক্রসফায়ার, লুণ্ঠনসহ বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সব অপরাধের বিচারের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।

৭. অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের দায়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোর ভবিষ্যতে কোনো ধরনের আইনি হয়রানি বা বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার সাংবিধানিক সুরক্ষা থাকতে হবে।

৮. জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকতে হবে।

৯. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ জন সমন্বয়কের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করতে হবে।

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. ইনামুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুইনুল ইসলাম এবং মুখপাত্র সিনথিয়া জাহীন আয়েশা।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ