ব্রোকারহাউজের লেনদেনে উৎসে কর কমানোর দাবি

পুঁজিবাজারে ব্রোকারহাউজগুলোর লেনদেনের উপর বিদ্যমান উৎসে করের হার কমানোর দাবি জানিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। পাশাপাশি এ কর সমন্বয়ের সুযোগ দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে তারা।

শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ডিবিএ নেতারা এ দাবি জানিয়েছেন।

ডিবিএ জানায়, পার্শ্ববর্তী দেশেরগুলোর মধ্যে ভারতে এই করের পরিমাণ ০.০৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ০.০০০৬৫ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ০.০০৭৫ শতাংশ এবং হংকং এ ০.০০৫৬৫ শতাংশ।

এ হিসেবে ১ লাখ টাকার লেনদেন হলে বাংলাদেশে ৫০ টাকা উৎসে কর দিতে হয়। ভারতে একই পরিমাণ লেনদেনের ক্ষেত্রে দিতে হয় ১০ রুপি, পাকিস্তানে মাত্র ৬৫ পয়সা। সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে এই করের পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। অন্যদিকে মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত ও তুরস্কে লেনদেনের উপর কোনো উৎসে করই দিতে হয় না।

বর্তমানে বাজারের অবস্থা খারাপ থাকায় কোনো ব্রোকারহাউজই মুনাফা করতে পারছে না। সর্বশেষ হিসাববছরেও সব প্রতিষ্ঠান পরিচালন লোকসান দিয়েছে। অথচ এই উৎসে কর সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই। কোনো ব্রোকারহাউজ লোকসান দিলেও তাকে এই কর দিতে হচ্ছে, যা অন্যায্য ও কর আইনের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ আয়কর কেবল নিট আয় বা মুনাফার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়ার কথা।

ডিবিএ নেতারা বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য কোম্পানী ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক প্রদত্ত সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মোট লেনদেনের উপর থেকে ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর সংগ্রহ করে থাকে (Tax on Securities Transaction) যা মোট আয় বা গ্রস প্রাপ্তির প্রায় ২৫ শতাংশ। অর্থ আইন, ২০০৫ এ- এই কর হার ০.০১৫ শতাংশ ছিল। এই করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশী।

তারা বলেন, উচ্চ হারে উৎসে করের কারণে লেনদেনের গতি বাড়ছে না। সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর কমিশন ব্রোকারহাউজের প্রধান আয়ের উৎস। অত্যধিক হারে কর আরোপ করার ফলে ব্রোকারহাউজগুলোর পক্ষে টিকে থাকা এবং পুঁজিবাজারে অবদান রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাজেই ব্রোকারহাউজের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং পুঁজিবাজারকে সক্রিয় করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের উপর বিদ্যমান কর হার যৌক্তিক কারণে কমানো প্রয়োজন।

ডিবিএ নেতারা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার অর্থনীতির নানাখাতে গতি সঞ্চারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। দূর্ভাগ্যবশত পুঁজিবাজারে এর কোনো ছোঁয়া লাগছে না। এ বাজার আগের মতোই অনেকটা উপেক্ষিত।

তারা অনুযোগ করে বলেন, সম্প্রতি দেশে একটি বড় বিনিয়োগ সম্মেলন হয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি বিনিয়োগকারী এতে অংশ নিয়েছেন। বর্তমান সরকারের একটি বড় সাফল্য এটি। কিন্তু এত বড় আয়োজনে কোথাও পুঁজিবাজারের উপস্থিতি ছিল না। সম্মেলনে নানা প্রতিষ্ঠানের বুথ থাকলেও পুঁজিবাজারের কোনো বুথ রাখা হয়নি। কোনো সেমিনারে পুঁজিবাজারের জন্য একটি স্লট ছিল না। অথচ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি আকৃষ্ট করার জন্যই পুঁজিবাজারকে প্রমোট করা খুবই জরুরি। কারণ বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগ করার আগে এক্সিটের সুযোগ তথা বিনিয়োগ প্রত্যাহারের উপায়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়। এক্সিটের সহজ উপায় থাকলে বিনিয়োগে তাদের আগ্রহ বাড়ে। কেবল পুঁজিবাজারই এক্সিটের সহজ সুযোগ দিতে পারে।

ডিবিএ নেতারা বলেন, আমরা আশা করি সরকার বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল ও কর্মদক্ষ করার প্রতি গুরুত্ব দেবে।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী, ডিবিএ’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোঃ সাইফুদ্দিন সিএফএ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, ব্র্যাক ইপিএস সিকিউরিটজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুর রহমান, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস, সিটি ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফফান ইউসুফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।