ভাঙা হবে কমলাপুর স্টেশন, হবে ‘মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’

ঢাকার কমলাপুরে দেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন ভেঙে ফেলবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এখানে হবে ‘মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’।

বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, এই মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব হাইস্পিড ট্রেন, মেট্রোরেল, পাতাল রেল এবং এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করবে। এখান থেকে রাজধানীর যে কোনো প্রান্তে যাওয়া যাবে।

‘মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’ ঘিরে থাকবে হোটেল, বিনোদন কেন্দ্রসহ নানা বাণিজ্যিক স্থাপনা। জাপানের কাজিমা করপোরেশন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। একই সংস্থা বিমানবন্দর স্টেশনকেও ‘মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’-এ রূপান্তরের দায়িত্ব পেয়েছে।

কমলাপুর স্টেশনের আন্ডারগ্রাউন্ডে ট্রেন থাকবে। এছাড়া বহুতল ভবনে নানান ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। একজন যাত্রী সহজেই এখান থেকে দেশের নানান প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া মেট্রোরেল, বাস, ট্রেনসহ নানান ধরনের পরিবহন পাবেন যাত্রীরা।

সড়কে চাপ কমিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধে ‘গ্রিন রেলওয়ের’ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে’ মোট ব্যয় ধরা হবে ৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৮ কোটি ৩৭ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কমলাপুর রেলস্টেশন ভেঙে নতুন ছক কষছে সরকার।

প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) চলতি মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, গ্রিন রেলপথ নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা মূলত সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করবো। পরামর্শকেরা মূল কাজ বাস্তবায়ন করবেন। তাদের সুপারিশে ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

মাসউদুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কমলাপুর রোলিং স্টক রিলোকেশন হবে। এছাড়া কমলাপুর স্টেশনের বিল্ডিং সরে যাবে। এমন একটা বিল্ডিং হবে যেখানে গ্রাউন্ডে রেলওয়ে হবে। কমার্শিয়াল ফ্যাসিলিটি থাকবে। জাপানিজ কোম্পানি এটা করবে। ডিজেল ওয়ার্কশপ ঢাকার বাইরে যাবে। রেললাইন রিলোকেট হবে।

এছাড়া বিমানবন্দর স্টেশনে মাল্টিমিডিয়া হাব হবে। রেললাইনের ওপর ভবন হবে। এছাড়া একটা বে টার্মিনাল হবে। আলাদা প্রকল্প নেওয়া হবে। পাইলট হিসেবে নারায়ণগঞ্জ, জয়দেবপুর ও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুট ইলেকট্রিক হবে। কমলাপুর মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব হবে। এখান থেকে ইন্ট্রিগ্রেডেট ট্রান্সপোর্ট সুবিধা মিলবে।

কমলাপুরের আগে দেশের প্রধান স্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়ায়। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণের যোগাযোগে বাধা ছিল ১৮৮৫ সালে নির্মিত ছোট্ট ওই স্টেশনটি। ১৯৫৮ সালে স্টেশনটি কমলাপুরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুই মার্কিন স্থপতি ড্যানিয়েল বার্নহ্যাম ও বব বুই সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউজ এবং গ্রাম-বাংলার কুঁড়েঘরের মিশেলে কমলাপুর স্টেশনের নকশা করেন। ১০ বছর পর ১৯৬৮ সালে চালু হয় কমলাপুর স্টেশন। শুধু ছাদ আর চারদিকে খোলামেলা- এ সাদাসিধে নকশাই কমলাপুরকে অনন্য করে তোলে।