ভারতে কেরালা রাজ্যে ফের বাড়ছে নিপা ভাইরাসের আতঙ্ক। নিপা সংক্রমণের ফলে এবার প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ বছরের এক যুবক। এরপরই মাস্ক নিয়ম জারি করল কেরালা সরকার। পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরতে হবে। মঙ্গলবার থেকেই জারি হয়েছে এই নিয়ম।
রোববার পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি) এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। বেশ কিছু দিন সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ওই যুবক। উল্লেখ্য, এর আগে গত জুলাইতে নিপা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১৪ বছরের এক কিশোরীর।
জানা যায়, মৃত ওই যুবক পড়াশোনা সূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। সম্প্রতি ওই যুবক এনকেফালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মলপ্পুরমের এক হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় ওই যুবকের। পরে ওই যুবকের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য কোঝিকোড়ের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরোলজি ল্যাবে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
রোববার এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুণের এনআইভিও। এবিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যুবকের সংক্রমণের বিষয়টি সুনিশ্চিত করেছে এনআইভি। মলপ্পুরমের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি। প্রোটোকল মেনে সমস্ত রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিপা সংক্রমণ রোধে ১৬টি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই যুবকের সংস্পর্শে আসা আরও পাঁচ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই পাঁচটি ওয়ার্ডের স্থানীয় নাট্যমঞ্চ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে এবং না খুলতে বলা হয়েছে।
WHO-এর মতে, ‘ফ্রুট ব্যাট’ নামক বিশেষ এক প্রজাতির বাদুড়ের থেকে অন্যান্য প্রাণী, এমনকি মানুষের মধ্যেও এই নিপা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলি হল শ্বাসকষ্ট, জ্বর, মাথা ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৩ জুলাই নিপা ভাইরাসে কেরালার মলপ্পুরমের পান্ডিক্কারে মৃত্যু হয় ১৪ বছরের এক কিশোরীর। এরপরেই রাজ্য জুড়ে জারি করা হয় একাধিক সতর্কতা। সকলকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া কোনও রকম উপসর্গ দেখলেই নিভৃতবাসে থাকার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য দফতর।
প্রসঙ্গত, গত পাঁচ বছরে নিপা ভাইরাসের কারণে কেরালায় মৃত্যু হয়েছে অনেক মানুষের। ২০১৮ সালে সেরাজ্যে প্রথম নিপা সংক্রমণ প্রকাশ্যে আসে। তখন এই ভাইরাসের ফলে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭ জন। এরপর ২০১৯ সালে ফের এর্নাকুলাম থেকে সংক্রমণের খবর আসে। তারপর ২০২১ এ নিপা-সংক্রমণে মারা যায় ১২ বছরের এক কিশোর। ২০২৩ এও নিপার কারণে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছরেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস। এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।