মতিঝিল থেকেই যাত্রীতে ঠাসা মেট্রো, পরের স্টেশনগুলোতে দুর্ভোগ

আপ ট্রিপের প্রারম্ভিক স্টেশন মতিঝিল থেকেই যাত্রীতে ঠাসা হয়ে ছাড়ছে মেট্রো। ফলে পরের স্টেশনগুলো থেকে মেট্রোতে উঠতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেল ৪টায় একাধিক মেট্রো স্টেশন ঘুরে এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা গেছে। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলার নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকেই এমন চিত্র দৃশ্যমান। এই সময়ে মেট্রোরেলে অফিস ফেরত যাত্রীদের চাপ বেশি, সঙ্গে অন্য যাত্রীরাও আছেন।

সেটশনগুলোতে দেখা গেছে, বরাবরের মতো কনকোর্স প্লাজায় খুবই কম সংখ্যক যাত্রী সিঙ্গেল টিকিট সংগ্রহের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন। তাদের সংখ্যা প্রতি লাইনে ৮ থেকে ১০ জনের মতো। সেখান থেকে তারা একক যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করে যাচ্ছেন প্লাটফর্মে। অন্যদিকে অফিস ফেরত বেশিরভাগ যাত্রীর রয়েছে এমআরটি পাস অথবা র‍্যাপিড পাস। ফলে তারা সরাসরি উঠে যাচ্ছেন প্লাটফর্মে।

সিঁড়ি বেয়ে প্লাটফর্মে উঠে দেখা গেছে, সেখানে লোকে লোকারণ্য। দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়াই মুশকিল। প্লাটফর্মের প্রতিটি দরজার দু’পাশে অন্তত ১০-১৫ জন যাত্রী লাইনে আছেন। আশপাশেও আছেন আরও অনেক যাত্রী। সবমিলিয়ে কয়েকশ যাত্রী একসঙ্গে মেট্রোতে ওঠার অপেক্ষায় আছেন।

৮ মিনিট পরপর মতিঝিল স্টেশন থেকেই যাত্রীবোঝাই করে আসছে মেট্রোর ট্রেনগুলো। ফলে সচিবালয় স্টেশন থেকে খুব বেশি যাত্রী উঠতে পারছেন না। রমজানের শুরুর দিকে যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি থাকলেও সেটি এখন আর দেখা যাচ্ছে না। সবাই লাইন ধরেই ট্রেনে উঠছেন। এই স্টেশন থেকে ট্রেনের প্রতি দরজা দিয়ে ১০ থেকে ১২ জনকে করে ট্রেনে উঠতে পেরেছেন। বাকিরা শেষের দিকে ধাক্কাধাক্কি করেও উঠতে না পেরে বেরিয়ে গেছেন। তারা থেকে গেছেন পরের ট্রেনের জন্য।

এরপর ট্রেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে দেখা যায়, ট্রেনের কোচ ভর্তি মানুষ। দাঁড়ানোর জন্য কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেন আসার পর ধাক্কাধাক্কি করে কিছুসংখ্যক যাত্রী ট্রেনে উঠতে পেরেছেন। এখানেও থেকে গেছেন কিছু সংখ্যক যাত্রী। এরপর শাহবাগ স্টেশনে কিছু যাত্রী নেমে যান ট্রেন থেকে। তবে প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী আবার উঠেন। এতে একেকজন যাত্রী একেবারে চেপে চেপে দাঁড়ান। তারপরও অসংখ্য যাত্রী পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করে থেকে যান। কারওয়ান বাজার স্টেশনেও একই অবস্থা দেখা যায়।

ট্রেনে থাকা যাত্রী নুবায়েত ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানের শুরুর দিন বিকেল থেকেই মেট্রোরেলে যাত্রীসংখ্যা বেশি। এই চাপ সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত থাকে। এই সময়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করা অনেকটা কষ্টদায়ক হয়ে যায়। তবুও সবাই ইফতারের আগে বাসায় ফিরবে, সেই কষ্টগুলো সহ্য করে যাত্রা করে।

কারওয়ান বাজার স্টেশনে এসে থামার পর ট্রেনে উঠতে পারেননি এমন এক যাত্রী কানিজ সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রেনে যে উঠতে পারিনি সেটা তো আপনি নিজের চোখে দেখেছেন। এই ট্রেন আসার তিন মিনিট আগে স্টেশনে এসেছি। মোটামুটি ৬০ শতাংশ যাত্রী প্রথম ট্রেনে উঠতে পেরেছেন। আমার মতো বাকিরা পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এদিকে রমজান উপলক্ষ্যে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বিশেষ নির্দেশনা ও সময়সূচি দিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পবিত্র রমজানের সময় ইফতারে পানি পান করার জন্য প্রত্যেক যাত্রী মেট্রো ট্রেন ও স্টেশন এলাকায় শুধুমাত্র ২৫০ মিলিলিটার পানির বোতল বহন করতে পারবেন। তবে পানি যেন পড়ে না যায় সেই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্যবহৃত পানির বোতল অবশ্যই প্ল্যাটফর্ম/কনকোর্স/প্রবেশ ও বাহির হওয়ার গেটে থাকা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।

আরও বলা হয়, কোন অবস্থাতেই প্ল্যাটফর্ম, কনকোর্স ও মেট্রো ট্রেনের ভেতর অন্য কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শনিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন এবং শুক্রবারের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।

অন্যদিকে সময়সূচি অনুযায়ী সর্ব প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সকাল ৭ট ১০ মিনিটে ছাড়বে ও সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টায় ছাড়বে। অন্যদিকে মতিঝিল থেকে সর্বপ্রথম ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সর্বশেষ ট্রেন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে। এই সময়সূচি অনুযায়ী পুরো রমজান মাস অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের আগের দিন পর্যন্ত চলবে বলে জানায় ডিএমটিসিএল।