মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপে সংঘাত: ২০২৫ সালের সবচেয়ে নিরাপদ ১৭টি দেশ

বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষ, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা, সিরিয়ায় আধিপত্য বিস্তার—সব মিলিয়ে পৃথিবী যেন এক ভয়ংকর অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াতেও ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি আরও অস্থির করে তুলছে অঞ্চলটিকে।

এমন এক বিশ্ব বাস্তবতায় বহু মানুষ আজ ভাবছে—কোথায় গেলে পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকা যাবে? কোথায় কাজ বা পড়াশোনা করে গড়ে তোলা যাবে এক স্থায়ী ভবিষ্যৎ?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৫ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিরাপত্তা সূচকের তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি হয়েছে এই প্রতিবেদন—২০২৫ সালের সবচেয়ে নিরাপদ ১৭টি দেশের তালিকা।

১. মালয়েশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়া। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা এই দেশটিকে অভিবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মাসিক বেতন গড়ে ৮০০ থেকে ১,৫০০ ডলার (প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা)। মুসলিমদের জন্য সমাজব্যবস্থাও বেশ অনুকূল।

২. পর্তুগাল
পশ্চিম ইউরোপের এই দেশটি শান্তিপূর্ণ, অভিবাসীবান্ধব এবং খরচে তুলনামূলক সাশ্রয়ী। গড় মাসিক বেতন ১,২০০–২,০০০ ডলার (দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা)। রাজনৈতিক পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ুর দিক থেকে পর্তুগাল বসবাসের জন্য এক আদর্শ দেশ।

৩. নরওয়ে
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে অপরাধহীন পরিবেশ, দক্ষ পুলিশ ব্যবস্থা ও সমান নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিখ্যাত। অভিবাসীদের জন্য উপযোগী এই দেশে গড় মাসিক আয় প্রায় ৩,০০০ ইউরো (৪ লাখ টাকা)।

৪. ফিনল্যান্ড
দশ বছর ধরে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে শীর্ষে থাকা ফিনল্যান্ড এবার নিরাপদ দেশের তালিকায় সপ্তম। উন্নত শিক্ষা, দ্রুত জরুরি সেবা এবং সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। গড় বেতন প্রায় ৩,০০০ ইউরো।

৫. জার্মানি
ইউরোপের অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালী দেশ। কম অপরাধ, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং প্রচুর চাকরির সুযোগ অভিবাসীদের আকৃষ্ট করে। ২০২৫ সালে ন্যূনতম মজুরি ঘন্টায় ১২.৪১ ইউরো (প্রায় ১,৭০০ টাকা)।

৬. সিঙ্গাপুর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর আইন-শৃঙ্খলা ও কঠোর নজরদারির জন্য বিখ্যাত। সহিংস অপরাধ প্রায় নেই বললেই চলে। গড় আয় ১,২০০–১,৫০০ সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ১ লাখ টাকা)। আইটি, স্বাস্থ্য ও ব্যাংক খাতে প্রচুর কর্মসংস্থান রয়েছে।

৭. সুইজারল্যান্ড
ঐতিহাসিকভাবে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ। উন্নত নাগরিক সুবিধা, উচ্চ আয় এবং বিশ্বমানের শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে। জেনেভা ক্যান্টনে সর্বনিম্ন মজুরি ঘণ্টায় ২৪ সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৩,৫০০ টাকা)।

৮. কানাডা
অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, মানবাধিকার রক্ষা, উন্নত জরুরি সেবা এবং অভিবাসীবান্ধব নীতির কারণে কানাডা বিশ্বের সবচেয়ে পছন্দের দেশগুলোর একটি। গড় ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ১৫–১৭ কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ১,৫০০ টাকা)।

৯. নিউজিল্যান্ড
দ্বীপ রাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড শান্তিপূর্ণ সমাজ, সহনশীল সংস্কৃতি ও কার্যকর দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত। এখানে গড় ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ২২.৭০ নিউজিল্যান্ড ডলার (প্রায় ১,০০০ টাকা)।

১০. আইসল্যান্ড
বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে আইসল্যান্ডের অবস্থান এক নম্বরে। সামরিক বাহিনী না থাকলেও আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেশটিকে ব্যতিক্রম করেছে। বিভিন্ন খাতে শ্রমিকদের আয় ঘণ্টায় ১,৭০০–২,০০০ আইসল্যান্ডিক ক্রোনা (প্রায় ১৫,০০০ টাকা)।

যুদ্ধের ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে যদি আপনি একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের কথা ভাবেন, তাহলে এই দেশগুলো হতে পারে আপনার আশার আলো। নিরাপত্তা, উচ্চ বেতন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে থাকা এই দেশগুলো এখনো শান্তির প্রতীক হয়ে আছে।
১১.অ্যান্টার্কটিকা
মানচিত্রের অবস্থান অনুসারে, পারমাণবিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে অ্যান্টার্কটিকা সবচেয়ে নিরাপদ স্থানগুলির মধ্যে একটি হতে পারে। পৃথিবীর দক্ষিণতম অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণে, এর কৌশলগত মূল্য খুব কম বা কোনও নেই। উপরন্তু, এর ৫.৪ মিলিয়ন বর্গমাইলের বিশাল ভূমি হাজার হাজার লোককে সম্ভাব্য সংঘাত থেকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে পারে।
১২.দক্ষিণ আফ্রিকা
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা সম্ভাব্য নিরাপদ স্থানের তালিকায় রয়েছে। প্রচুর খাদ্য উৎস, উর্বর জমি এবং মিঠা পানির অবারিত উৎসের কারণে এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। তাছাড়া, দক্ষিণ আফ্রিকার আধুনিক অবকাঠামোও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে নিরাপদ আবাস হিসেবে।

১৩.ফিজি

ওশেনিয়ার একটি প্রত্যন্ত দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি। এটি তার নিকটতম প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রায় ২,৭০০ মাইল দূরে অবস্থিত। সামরিক উপস্থিতির কারণে ফিজির কৌশলগত গুরুত্ব আছে। তবে বিশ্ব শান্তি সূচকে দেশটি উচ্চ স্থানে আছে। ফিজির সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদও একে নিরাপদ রাখতে পারে।
১৪.চিলি
৪,০০০ মাইলেরও বেশি বিস্তৃত দক্ষিণ আমেরিকান দেশ চিলি। দেশটি বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ফসল এবং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে চিলিতেই সবচেয়ে উন্নত অবকাঠামো আছে।
১৫.টুভালু
হাওয়াই এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত একটি দ্বীপ টুভালু। এখানে জনসংখ্যা মাত্র ১১,০০০। দ্বীপের দুর্বল অবকাঠামো এবং সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকায় এ নিয়ে আক্রমণকারীদের অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।
১৬.গ্রিনল্যান্ড
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ এবং ডেনমার্কের একটি অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড। এর দূরবর্তী অবস্থান, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং মাত্র ৫৬,০০০ জনসংখ্যার কারণে এটি কোনো বৈশ্বিক পরাশক্তির জন্য লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা কম।
১৭.ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া, যদিও একটি ছোট দেশ, কিন্তু তারা দৃঢ়ভাবে বলেছে যে এটি বিশ্বব্যাপী সংঘাতে কোনও পক্ষের সাথে নিজেকে মেলাবে না। এর প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি, আহমেদ সুকর্ণো, দেশের পররাষ্ট্র নীতিকে মুক্ত এবং সক্রিয় হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখনো তারা সে পথেই হাঁটছে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ