মহানবী সা. দুঃখ পেলে যেভাবে প্রকাশ করতেন

হজরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.-এর পুত্র ইবরাহিম আ.-কে (তাঁর মৃত্যুর সময়ে) দেখতে গেলাম। (তখন দেখলাম নবী সা. তাঁকে এতই ভালোবাসতেন যে, সে মুহূর্তে তিনি ছুটে আসেন এবং) তাঁকে একবার ডাক দিয়ে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিলেন।

এ সময় প্রিয় নবী সা.-এর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। তখন বললেন, চোখ অশ্রুপাত করছে, হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু মুখ দিয়ে আমি শুধু এতটুকুই বলতে পারি যতটুকুতে আমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট থাকেন। হে ইবরাহিম! তোমার বিদায়ে আমি খুবই ভারাক্রান্ত ও ব্যথিত। (আখলাকুন্নবী, হাদিস : ১৯৪)

উল্লেখিত হাদিসে নবী সা.-এর কান্না ও ব্যথিত হওয়ার অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি আনন্দের মুহূর্তে যেমন ভারসাম্য রক্ষা করতেন ঠিক তেমনি দুঃখ ও বেদনা প্রকাশের সময়ও ভারসাম্য রক্ষা করতেন।

তিনি প্রচণ্ড খুশি হলেও কখনো অট্ট হাসি দিতেন না এবং দুঃখ পেলেও কখনো খুব জোরে আওয়াজ করে কিংবা চিৎকার করে কান্নাকাটি করতেন না। তার দুঃখ প্রকাশের সময় চোখ দিয়ে অশ্রু বের হতো হবে কোনো ধরণের চিৎকার ধ্বনি বের হতো না।

রাসূল সা.-এর ছেলের মৃত্যই এর প্রমাণ বহন করে। নিজের ছেলের মৃত্যুতে শেষবারের মতো যখন তিনি তাঁকে বিদায় জানিয়েছিলেন তখন তার হৃদয় বেদনায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছিল কিন্তু মুখে কান্নার ধ্বনি, চিৎকার ইত্যাদির পরিবর্তে চোখে শুধু অশ্রু ঝরেছিল।

আরেক হাদিসে হজরত খালিদ ইবনে সালামা মাখযুমী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত যায়দ ইবনে হারিসা রা, যখন মাসতার যুদ্ধে শহিদ হন, তখন রাসূল সা. তাঁর বাড়িতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন হারিসের মেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। রাসূল সা. নিজেও তাঁর সঙ্গে কাঁদতে শুরু করলেন। তখন একজন সাহাবি রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নিজেও কাঁদছেন! রাসূল সা. বললেন, এটা এক বন্ধুর প্রতি অপর বন্ধুর ভালোবাসার আন্তরিক বহিঃপ্রকাশ। (রাসূল সা. যায়েদ ইবনে হারেসাকে হারানোর বেদনা সহ্য করতে না পেরে তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে শুরু করে।) (আখলাকুন্নাবী, হাদিস : ১৯৫)

হজরত যায়েদ ইবনে হারিসা রা. রাসূল সা.-এর অন্যতম প্রিয় সাহাবি ছিলেন। জাহেলী যুতে তিনি অপহৃত হয়ে গোলাম হিসেবে বিক্রি হন। উম্মুল মুমিনীন খাদিজাতুল কুবরা রা. তাকে কিনে রাসূল সা.-কে উপহার দেন।

নবী সা. যায়েদকে আজাদ করে নিজের পালনপুত্র হিসেবে লালন পালন করেন। তিনি তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। রাসূল সা. তাঁকে এতো বেশি স্নেহ করতেন যে, যখন যায়েদের মা-বাবা তাঁকে খুঁজে পেল এবং নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলো তখন তিনি নবীজি সা.-কে ছেড়ে নিজের মা-বাবার সঙ্গে যেতে অস্বীকার করলেন এবং নবীজির কাছেই থেকে গেলেন।

তিনি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। মুতার যুদ্ধে নবীজি তাকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। এই যুদ্ধে (৮ম হিজরিতে) তিনি শহীদ হন।
তাঁর শাহাদাতের কথা শুনে নবীজি তার বাড়িতে যান সমবেদনা জ্ঞাপনের জন্য। বাড়িতে গিয়ে তার মেয়ের কান্না দেখে তিনি নিজেকে সংবরণ করতে পারেননি। তাঁর চোখ দিয়েও অশ্রু ঝরতে শুরু করে।

এর মাধ্যমে বুঝা যায়, রাসূল সা.ও শোক প্রকাশ করেন করতেন তবে তাঁর শোক প্রকাশে অস্বাভাবিক কিছু প্রকাশ পেত না।