আল্লাহর নেয়ামত অসীম। বান্দার পক্ষে তা গণনা করা সম্ভব নয়। আবার সেসব নেয়ামতের শোকর আদায়ের সময়সীমারও অন্ত নেই। বান্দার দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনে আল্লাহর অশেষ নেয়ামতের শোকর পরিপূর্ণভাবে আদায় করা অসম্ভব। এরপরও বান্দাকে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে যেতেই হবে। কখনও বান্দা আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারবে না। এটিই হলো সৃষ্টিকর্তার বিধান।
এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তা হলে আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার নেয়ামতের শোকর আদায় করো, আমার অকৃতজ্ঞতা করো না।’ (সুরা বাকারা : ১৫২)
ইসলামী পরিভাষায় আনন্দ বা সুখের কারণে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাকে শোকর বলা হয়। রাসুল সা. একাধিক হাদিসে সেজদায়ে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন। তবে এ সেজদা থেকে উদ্দেশ্য হলো দুই রাকাত নামাজ পড়া, যাকে সালাতুশ শোকর বা সেজদার নামাজ বলা হয়।
হজরত আবু বকরা (রা.) বলেন, ‘যখন নবী করিম (সা.)-এর নিকট কোনো খুশির সংবাদ বা এমন কিছু পৌঁছত যাতে তিনি সন্তুষ্ট হতেন, তখন তিনি আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়তেন।’ (আবু দাউদ : ২৭৭৬)
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর বর্ণনা মতে, সেজদায়ে শোকর বাক্যটির মধ্যে ‘সেজদা’ দ্বারা রূপক অর্থে নামাজকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু গ্রহণযোগ্য ফাতাওয়া অনুযায়ী অজু সহকারে কেবলামুখী হয়ে একটা সেজদা দেওয়ার মাধ্যমেও শুকরিয়া আদায় করা যায়।
সুতরাং কোনো মুমিন বান্দা যদি দুই রাকাত নফল নামাজ দ্বারা শুকরিয়া আদায় করে- তখন তাকে সালাতুশ শোকর বলবে। আর একটা সেজদার মাধ্যমে যদি শুকরিয়া আদায় করে তখন তাকে সেজদায়ে শোকর বলবে। এ উভয় পদ্ধতিতে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা যাবে। সালাতুশ শোকরের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, কিন্তু দুই রাকাতের কম না হওয়া চাই। আর তা নিষিদ্ধ ও মাকরুহ সময়ে আদায় করা যাবে না। সালাতুশ শোকরের স্বতন্ত্র কোনো নিয়ম নেই, বরং অন্যান্য নফল নামাজের মতো করেই আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৭/১২৫)