মুত্তাকিদের জান্নাতের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে কোরআনে

মুত্তাকি বলা হয় যাদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভয় আছে এবং যারা আপন রবের ভয়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। তবে মুত্তাকি মানে এমন নয় যে কখনো কোনো গুনাহ হয় না। স্খলন হতে পারে, ভুল হতে পারে, কিন্তু মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য হল, গুনাহ হয়ে গেলে মনে অনুতাপ জাগে, আল্লাহর ভয় জাগে এবং এই উপলব্ধি জাগে যে, আমি আমার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছি। তখন সে ব্যাকুল হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। তওবা করে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করে ফেলে জেনে বুঝে তাতে অটল থাকে না।’ -(সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৩৫)

পৃথিবীর অন্যান মানুষ ও মুত্তাকিদের মাঝে পার্থক্য হলো তারা নিজের মনমতো করে পৃতিবীতে জীবন কাটায়। আর মুত্তাকিরা ধৈর্যধারণ করে ও পার্থিব জীবনের চাকচিক্য ছেড়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে । এর বিনিময়ে তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাদের জন্য প্রতিশ্রুত জান্নাত কেমন হবে— এ নিয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,

مَثَلُ الۡجَنَّۃِ الَّتِیۡ وُعِدَ الۡمُتَّقُوۡنَ ؕ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ؕ اُكُلُهَا دَآئِمٌ وَّ ظِلُّهَا ؕ تِلۡكَ عُقۡبَی الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا ٭ۖ وَّ عُقۡبَی الۡكٰفِرِیۡنَ النَّارُ

মুত্তাকীদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্ত এরূপ, তার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। তার খাদ্যসামগ্রী ও তার ছায়া সার্বক্ষণিক। যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, এটি তাদের শুভ পরিণাম আর কাফিরদের পরিণাম আগুন। (সূরা রাদ, আয়াত : ৩৫)

এই আয়াতে মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এ নহর সমূহের বিস্তারিত বর্ণনায় এসেছে যেএতে আছে নির্মল পানির নহর, আছে দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর, আছে পরিশোধিত মধুর নহর এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে বিবিধ ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।

মুত্তাকিদের বিপরীতে যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ীভুঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেবে।

মুত্তাকিদের জন্য জান্নাতের এই নেয়ামতসর্বদা থাকবে, তাতে কোনো অভাব বা কমতি দেখা দেবে না। একথাই এখানে বোঝানো হয়েছে।

এক হাদিসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সালাত আদায়ের সময় এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা নিতে যাচ্ছিলেন তারপর আবার ফিরে আসলেন। পরে সাহাবায়ে কিরাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি জান্নাত দেখেছি, তার থেকে আঙ্গুরের একটি থোকা নিতে চাচ্ছিলাম। যদি তা নিয়ে নিতাম তবে যতদিন দুনিয়া থাকত ততদিন তোমরা তা খেতে পারতে। (বুখারী, হাদিস : ১০৫২, মুসলিম, হাদিস : ৯০৭)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতবাসীগণ খাবে, পান করবে অথচ তাদের কোন কাশি, থুথু আসবে না, পায়খানা ও পেশাব করবে না। তাদের খাবারের ঢেকুর আসবে যার সুগন্ধ হবে মিসকের সুগন্ধির মতো, দুনিয়াতে যেভাবে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেয় তেমনি তাদেরকে সেখানে তাসবীহ ও পবিত্রতা ঘোষণার জন্য ইলহাম করা হবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৮৩৫)