পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড’র প্রাইভেট প্লেসমেন্ট’র মাধ্যমে ২৭৫ কোটি টাকার সংঘবদ্ধ আর্থিক জালিয়াতি ও ভুয়া তথ্য উপস্থাপনার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এই কেলেঙ্কারির পেছনে কোম্পানির উদ্যোক্তা, তৎকালীন পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিব, সিএফও থেকে শুরু করে শেয়ার বরাদ্দ পাওয়া বাইরের ব্যক্তিরাও জড়িত বলে উঠে এসেছে তদন্তে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’র (বিএসইসি) তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ প্রেরণ ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারিসহ কঠোর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) বিএসইসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনঃ সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পুঁজিবাজারে আলোচিত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড ২০১৯ সালে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট’র মাধ্যমে প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের প্রায় ২৭ কোটি ৫১ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ২৭৫ কোটি টাকার মূলধন বাড়ায়। ফলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৯ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৫ দশমিক ০৫ কোটি টাকায়।
তবে তদন্তে উঠে এসেছে, এই অর্থ জমা প্রকৃত অর্থে হয়নি। অর্থাৎ, মূলধন বৃদ্ধি নকল কাগজপত্র ও মিথ্যা আর্থিক তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়, যার মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ আর্থিক প্রতারণা সংগঠিত হয়।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি: আইপিও প্রস্পেক্টাসে মিথ্যা তথ্য প্রদানের জন্য কোম্পানির উদ্যোক্তা, তৎকালীন পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, সিএফও ও কোম্পানি সচিবসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এই ঘটনার মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত আব্দুল কাদের ফারুক ও তার সহযোগী আশোক কুমার চিরিমার (ভারতীয় নাগরিক)-এর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ প্রেরণ এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ইস্যু ব্যবস্থাপকের জড়িত থাকা: দুইটি ইস্যু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান – এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড ও সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড) – ডিউ ডিলিজেন্স সার্টিফিকেট ও প্রস্পেক্টাসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলে।
দুই ইস্যু ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন সিইওদের ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজার কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেইসাথে নিবন্ধন সনদ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নিরীক্ষকদের অনিয়ম: চারটি অডিট ফার্ম – আহমেদ অ্যান্ড আখতার, সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কো., মাহফেল হক অ্যান্ড কো., এ.টি.এ খান অ্যান্ড কো ভুয়া আর্থিক বিবরণী প্রত্যয়ন করেছে।
এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
বাইরের প্লেসমেন্ট হোল্ডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: যেসব বহিরাগত প্লেসমেন্ট হোল্ডার অর্থ জমা না দিয়ে বা আংশিক জমা দিয়ে শেয়ার গ্রহণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও দুদকে অভিযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আব্দুল কাদের ফারুক ও আশোক কুমার চিরিমারের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা: এই কেলেঙ্কারির মূলহোতা হিসেবে দায়ী করা হয়েছে আব্দুল কাদের ফারুককে এবং সহযোগী ভারতীয় নাগরিক আশোক কুমার চিরিমারকে, যাদের বিরুদ্ধেও দুদকে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের এই কেলেঙ্কারির ঘটনা বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ইতিহাসে অন্যতম বড় আর্থিক জালিয়াতি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিএসইসি’র এই পদক্ষেপে বাজারে আস্থা ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।