রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে নতুন রেকর্ড ছাড়ালো ৩০ বিলিয়নের ঘর

#একক অর্থবছরে রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার

#২৪ মাস পর রিজার্ভ ছাড়াল ৩১ বিলিয়ন ডলার

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অবশেষে ২৪ মাস পর আবারো তা ৩১ বিলিয়ন ছাড়াল। এর আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে সাথে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারায় বাড়ছে এই বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ। এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৩০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। একক অর্থবছর হিসাবেও এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রবাসী আয়ের রেকর্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রবিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ অর্থ পাচারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। যে কারণে চলতি অর্থবছরের দুই দিন বাকি থাকতেই প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। আবার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ পেয়েছে।
ব্যাংকাররা বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের দাম ভালো পাওয়ায় এবং একইসঙ্গে সরকারের কড়া মনিটরিংয়ের ফলে, হুন্ডি চ্যানেল অনেকটা বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ব্যাপক পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টাকা পাচারকারীরা অধিকাংশই বিদেশে। যার কারণে হুন্ডির প্রভাব বন্ধ রয়েছে। যেকারণে এখন প্রতি মাসেই প্রায় আড়াই বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স আসছে।

আরও পড়ুনঃ ২৮ দিনে রেমিট্যান্স ছাড়ালো আড়াই বিলিয়ন ডলার

গত জুলাই পরবর্তী সরকার পরিবর্তন হলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। আর এর পর পরই দেশে বাড়তে থাকে রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ। একের পর এক রেকর্ড গড়ে রেমিট্যান্সে। প্রতি মাসেই প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিকতা রয়েছে। আর এর মধ্যে দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের নতুন রেকর্ড গড়েছে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। যদিও অর্থবছর শেষে হতে এখনো দুই দিন বাকি রয়েছে। তবে এরই মধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে আসেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্যদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে চলতি মাস জুনের ২৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনে ২৫৩ কোটি ৯২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৩৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৬১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
এছাড়াও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি মাস জুনের ২৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এর আগেও প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ছিল। সদ্য বিদায়ী মে মাসে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে, মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এব সবশেষ মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।

২৪ মাস পর রিজার্ভ ছাড়াল ৩১ বিলিয়ন ডলার: দেশে দীর্ঘদিন ধরেই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অবশেষে ২৪ মাস পর আবারো তা ৩১ বিলিয়ন ছাড়াল। এর আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারায় বাড়ছে এ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ রয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৩২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
এরআগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২১ বিলিয়নে নেমে যায় বিপিএম-৬ রিজার্ভ। এরপর ধারাবাহিক কমে ১৮ বিলিয়নে নামে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অর্থপাচার কমে আসায় রিজার্ভ বাড়তে শুরু করে। ধীরগতিতে বেড়ে ২৪ মাস পর ২৬ বিলিয়ন অতিক্রম করল রিজার্ভ।

এ দুই হিসাবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে জানানো হয়। সে হিসাবে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়। সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার ছড়িয়েছে।

একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের ‘বিপিএম-৬’ পরিমাপ অনুসারে। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বের হয়।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ